• বেলদায় রেললাইন ধরে ছুটে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বালককে বাঁচালেন দুই যুবক
    বর্তমান | ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • সংবাদদাতা বেলদা: রেললাইন ধরে ছুটে যাচ্ছে বছর দশেকের এক বালক। আর তাকে বাঁচাতে পিছনে হাতে লাল টুপি নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে দৌড়াচ্ছেন দুই যুবক। খড়্গপুরের দিক থেকে আপলাইন ধরে সামনে থেকে ধেয়ে আসছে মালগাড়ি। মঙ্গলবার বিকেলে বেলদা কেশিয়াড়িমোড় সংলগ্ন ২৪ নম্বর রেলগেট এলাকায় এমনই দৃশ্য দেখলেন এলাকার বাসিন্দারা। অবশেষে ট্রেন থামিয়ে ওই বালককে উদ্ধার করল দুই যুবক। তুলে দেওয়া হল রেল পুলিসের হাতে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন সকলে।


    জানা গেছে এদিন হাওড়া-ভুবনেশ্বর জনশতাব্দী এক্সপ্রেস থেকে বেলদা স্টেশনে নামে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের মসজিদপাড়া এলাকার ১০ বছরের ওই বালক। ভুল স্টেশনে চলে এসেছে বুঝতে পেরে আতঙ্কে ট্রেন লাইন ধরে ছুটতে থাকে সে। আর ঠিক তখনই ২৪ নম্বর রেলগেটে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক যুবক ও এক বাসযাত্রী তা দেখতে পেয়ে ওই বাচ্চাটিকে বাঁচাতে রেললাইন ধরে ছুটতে থাকেন। তখনই খড়্গপুরের দিক থেকে আপলাইন ধরে দ্রুত গতিতে আসছিল একটি মালগাড়ি। নিজেদের জীবনের পরোয়া না করে হাতে একটি লাল রঙের টুপি নাড়াতে নাড়াতে রেললাইন ধরে ছুটতে থাকেন ওই দুই যুবক। আর তা দেখতে পেয়ে মাঝপথে ট্রেন থামিয়ে দেন চালক। রক্ষা পায় বালকটি। তাকে উদ্ধার করে তুলে দেওয়া হয় রেল পুলিসের হাতে। 


    রেলগেটের দায়িত্বপ্রাপ্ত গেটম্যান গৌতম নন্দী বলেন, জনশতাব্দী চলে যাওয়ার পরে একটি মালগাড়ির সিগন্যাল হয়। রেলগেট ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি আপলাইন ধরে একটি বাচ্চা ছুটে যাচ্ছে আর দুই যুবক হাতে একটা লাল টুপি নিয়ে নাড়াতে নাড়াতে তার পেছনে দৌড়াচ্ছে। চালক তা দেখতে পেয়ে ট্রেন থামানোয় বেঁচে যায় বাচ্চাটি। স্থানীয় রেল পুলিসকে খবর দিয়ে বাচ্চাটি তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।


     উদ্ধারকারী যুবক খাকুড়দার বাসিন্দা পূর্ণচন্দ্র রাহুল বলেন, বাসে চেপে বাড়ি ফিরছিলাম। গেট পড়ে যাওয়ায় দাঁড়িয়েছিল বাসটি। হঠাৎ দেখি একটি বাচ্চা রেললাইন ধরে ছুটে যাচ্ছে। আর তার পেছনে স্থানীয় এক যুবক তাকে বাঁচাতে রেললাইন ধরে ছুটছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে বাস থেকে নেমে কোনওকিছু না ভেবে বাচ্চাটিকে বাঁচাতে দু’হাত তুলে ছুটতে থাকি। ওই যুবক তখন হাতে একটি লাল টুপি নিয়ে নাড়াতে নাড়াতে দৌড়চ্ছিলেন। বাচ্চাটির থেকে প্রায় কুড়ি হাত দূরে থেমে যায় ট্রেনটি। আমরা দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেলি। প্রায় এক কিলোমিটার ছুটতে হয় আমাদের। তাকে নিয়ে এসে গেটম্যানের হাতে তুলে দি‌ই। 


    বাইকচালক অরুণাভ মাইতি বলেন বাচ্চাটিকে দৌড়াতে রেখে প্রথমে হকচকিয়ে যাই। কোন কিছু না ভেবে বাইকটি রেখে পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছেলের মাথা থেকে লাল রঙের টুপি খুলে নিয়ে রেললাইন ধরে দৌড়াতে থাকি। একটাই লক্ষ্য ছিল ট্রেন থামিয়ে বাচ্চাটিকে বাঁচানো। অবশেষে চালক আমাদের দেখতে পেয়ে ট্রেন থামিয়ে দেন। বাচ্চাটিকে বাঁচাতে পেরে খুবই আনন্দ হচ্ছে। রেলপুলিস সূত্রে খবর বাচ্চাটির বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং এলাকায়। ছেলেটিকে উদ্ধার করে এদিন খড়্গপুর চাইল্ডলাইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)