প্রতিষ্ঠা দিবসে সকাল থেকে পুজো, মহারাজ নন্দকুমারের গুহ্যকালী মন্দিরে পুজো দিতে ভক্তের ঢল
বর্তমান | ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
সংবাদদাতা, রামপুরহাট: একদিকে রটন্তী চতুর্দশী তিথি, অন্যদিকে প্রতিষ্ঠা দিবস। এই দুই তিথির যোগে মঙ্গলবার মহারাজ নন্দকুমার প্রতিষ্ঠিত নলহাটির গুহ্যকালী মন্দিরে ব্যাপক ভক্ত সমাগম ঘটল। সকাল থেকে পুজো, বলিদান, হোমযজ্ঞ চলল মন্দিরে। এলাকার মানুষ তো রয়েছেই, দূরদুরান্ত থেকেও বহু মানুষ এদিন গুহ্যকালীর কাছে পুজো দিতে ভিড় জমিয়েছিলেন। কথিত আছে, পুরাকালে মগধের রাজা জরাসন্ধ পাতালে এই কালীর সাধনা করতেন। তখন বিহারের গয়াকে মগধ বলা হতো। জরাসন্ধের মৃত্যুর পর বহুদিন মাটির নীচে থেকে যায় এই কালী। এরপর রাজস্থানের রানি অহল্যা বাঈ কিছুদিন মগধে আসেন। সেই সময়ে শিবের স্বপ্নাদেশ পেয়ে তিনি মগধের একটি জায়গায় খনন কার্য চালান। সেখানেই কষ্টি পাথরের বেদি সমেত কালীমূর্তি পান। জায়গাটি কাশীরাজ চৈত্য সিংয়ের। তাই মূর্তিটি তাঁকে দিয়ে দেন। কিন্তু মূর্তিটি তদানীন্তন ইংরেজ শাসক ওয়ারেন হেস্টিংসের নজরে পড়ে যায়। তিনি ইংল্যান্ডের মিউজিয়ামে সেটি নিয়ে যেতে চান। তাই হেস্টিংসের হাত থেকে বাঁচতে রাজা চৈত্য সিং কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটের কাজে গঙ্গার নীচে মূর্তিটি লুকিয়ে রাখেন। কালক্রমে মহারাজ নন্দকুমার কাশী পৌঁছান। তখন তিনি বাংলা, বিহার, ওড়িশার নবাব সিরাজদৌল্লার অধীনে বাংলার দেওয়ান ছিলেন। তিনি স্বপ্নাদেশ পেয়ে মূর্তিটিকে গঙ্গা থেকে উদ্ধার করে জলপথে হুগলি, মুর্শিদাবাদ হয়ে দ্বারকা নদ পেরিয়ে ব্রাহ্মণী নদীর ধারে আকালিপুর গ্রামে আসেন। এরপর নদী তীরবর্তী বটগাছের নীচে মূর্তিটি রেখে পুজোপাঠ শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি মায়ের মন্দির নির্মাণে হাত লাগান। মা এখানে ভয়ঙ্কর দর্শনা। সাপের কুণ্ডলীর উপর পদ্মাসনে অধিষ্ঠিত। দেহের অলঙ্কারও সাপের। হাতে পায়ে সাপের আকৃতির চুড়ি, নুপুর। মাথায় সহস্র নাগের ফনা যুক্ত মুকুট। এক মানুষ সমান এই মূর্তির উপরিভাগ উন্মুক্ত। নিম্নভাগে ঘাগরা পড়ানো।
এদিকে ইংরেজরা নন্দকুমারকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে বন্দি করে। দীর্ঘ বিচারের পর ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৫ আগস্ট তাঁর ফাঁসি হয়। কথিত আছে, বন্দিদশায় মহারাজ নন্দকুমার শুক্লা চতুর্দশী তিথিতে মন্দির নির্মাণ শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে তাঁর ছেলে গুরুদাস রায় মাঘ মাসে রটন্তী কালীপুজোয় অসম্পূর্ণ মন্দিরে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন। তাই দু’টি তিথিকেই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস ধরে বহুকাল থেকে এই বিশেষ পুজো হয়ে আসছে। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, এই পুজোর ২৪৯ বছর অতিক্রান্ত হল। বছরের এই দিনটিতে মাকে স্বর্ণালঙ্কারে সাজিয়ে প্রথমে চলে নিত্যপুজো। পরে বিশেষ পুজো ও বলিদান, হোমযজ্ঞ পর্ব চলে। দুপুরে খিচুড়ি, সাতরকম ভাজা, বলির পাঁঠার মাংস দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। - নিজস্ব চিত্র