নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: আগ্নেয়াস্ত্র সহ স্থানীয়দের হাতে পাকড়াও হওয়া দুই যুবককে ধরতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হল সিউড়ি থানার পুলিস। খোদ আইসির কলার ধরে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। পুলিসের হাতে ধৃত যুব তৃণমূল নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকালে সিউড়ির মল্লিকপুর পঞ্চায়েতের মিনিস্টিল চত্বর এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিস লাঠিচার্জ করে। পুলিসি হেনস্তায় অভিযুক্তদের ধরতে ধরপাকড়ও চলে। তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল যুব সভাপতি বাবু আনসারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১৩জন মহিলা সহ মোট ১৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র সহ স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়া দু’জনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম সুলুদ্দিন আনসারি ও মাল্লু আনসারি। তাদের কাছ থেকে তিনটি বন্দুক সহ মোট ছ’রাউন্ড কার্তুজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
সিউড়ির ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, পুলিস কাউকে ছাড়বে না। পুলিস পুলিসের কাজ করবে। যে দলেরই হোক। দল, রং দেখার দরকার নেই।
মিনিস্টিলের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এদিন সকালে দুই যুবক বন্দুক নিয়ে এলাকায় ঢুকেছিল। স্থানীয়রা তাদের পাকড়াও করে হাত-পা বেঁধে মারধর করে। ঘটনার খবর পেয়েই সিউড়ি থানার পুলিস সেখানে পৌঁছয়। স্থানীয়দের হাত থেকে ওই দুই যুবককে উদ্ধারের চেষ্টা করতেই পুলিসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ে। পুলিসের সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতা সহ কয়েকজনের বচসা শুরু হয়। একসময় তা চরমে পৌঁছয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিস লাঠিচার্জ করে। সেইসঙ্গে ধরপাকড় শুরু হয়। অভিযোগ, আমির আনসারি নামে এক যুবককে পাকড়াও করার সময় সে আইসির কলার চেপে ধরে। পুলিস জানিয়েছে, ওই যুবক আগে একটি ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। কিছুদিন আগেই সে জামিনে মুক্ত হয়। তাকে কোনওমতে গাড়িতে তোলা হয়। যদিও যুব তৃণমূল নেতা বাবু আনসারিকে পাকড়াও করে গাড়িতে তোলার সময় স্থানীয় কয়েকজন তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়ে পুলিস তাকেও গ্রেপ্তার করে। ঘটনার পরই র্যাফ সহ বিশাল পুলিস বাহিনী ও পদস্থ কর্তারা সেখানে পৌঁছন। পুলিসি হেনস্তার অভিযোগে জড়িতদের খোঁজে এলাকার বাড়ি বাড়ি অভিযান চালানো হয়। পুলিসের তরফে একাধিক মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ওই এলাকা থেকে বেশকিছু বাইকও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে। ঘটনায় পুলিসের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করা হবে বলে জানা গিয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র সহ দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজন মারধরে জখম হওয়ায় তাকে সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিন দুপুরে পুলিসের ধরপাকড় শুরু হতেই গোটা এলাকা কার্যত পুরুষশূন্য হয়ে যায়। রাস্তাঘাটও শুনশান হয়ে যায়। মূহূর্তের মধ্যে এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, জমি বিবাদ ঘিরে দু’পক্ষের পুরনো ঝামেলা চলছিল। এদিন একপক্ষের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র সহ এলাকায় ঢুকেছে বলে চাউর হয়ে যায়। তাদের ধরে দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে রাখে কয়েকজন। পরে সেখানে পুলিস পৌঁছতেই ঝামেলা অন্যমাত্রা নেয়। আগ্নেয়াস্ত্রগুলি কোথা থেকে এবং কী উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা হয়েছিল তা খতিয়ে দেখছে পুলিস। জেলার পুলিস সুপার আমনদীপ বলেন, পুলিস ঘটনাস্থলে পৌঁছলে স্থানীয়দের তরফে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পুলিসি হেনস্তার ঘটনাও ঘটেছে। ঘটনায় জড়িত অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও যারা জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার করা হবে।