বাজেট প্রতিশ্রুতির এক বছর পার, ৩ কোটি! চাকরি পাননি একজনও
বর্তমান | ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: নরেন্দ্র মোদি জমানার তিনটি ইনিংসে একটি শব্দই ‘সর্বজনীন’—প্রতিশ্রুতি। গত বছর ভোটে জিতে এসেও বাজেটে একটি ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই প্রতিশ্রুতি ছিল প্রায় ৩ কোটি চাকরির। চাকরির বাজার চাঙ্গা করার দাবি জানিয়ে তিনটি প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছিল। এর মধ্যে দু’টি প্রকল্প ছিল প্রভিডেন্ট ফান্ড বা পিএফ ভিত্তিক। অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, এই তিনটি স্কিম থেকেই সংগঠিত ক্ষেত্রে ২ কোটি ৯০ লক্ষ চাকরি হবে। আগামী শনিবার ফের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করতে চলেছেন নির্মলা সীতারামন। কিন্তু ৩ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতির কী হল? গতবারের ঘোষিত স্কিমগুলির হিসেব কষতে গিয়ে সরকারি স্তরেই নাজেহাল অবস্থা। কারণ, নিট ফল শূন্য। ৩ কোটি তো দূরের কথা, স্কিমের আওতায় তিনটি চাকরিও হয়নি বলে সূত্রের খবর।
প্রথম স্কিমের ঘোষণা ছিল, বেসরকারি সংস্থায় নতুন চাকরি পাওয়া কর্মীদের এক মাসের বেতন দেবে সরকার। সর্বাধিক ১৫ হাজার টাকা পাওয়া যাবে ওই স্কিমে। দ্বিতীয় প্রকল্পে, কর্মচারী ও কর্মদাতা সংস্থা উভয়ের জন্যই ইনসেন্টিভ ঘোষণা। আর তৃতীয় স্কিমে শুধুমাত্র কর্মদাতা সংস্থাকে মাসিক তিন হাজার টাকা করে দু’বছরের আর্থিক সহায়তার কথা জানানো হয়েছিল। কেন ওই স্কিমগুলির সুবিধা এখনও কেউ পেলেন না? সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, বাজেটে প্রকল্পের প্রতিশ্রুতিই শুধু ছিল। শ্রমমন্ত্রক আনুষ্ঠানিকভাবে তার ঘোষণা এখনও করেনি। স্কিমগুলির কাজ এগতে স্রেফ কিছু সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হয়েছে বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছে। তাতে যে ভালো সাড়া মিলেছে, এমনটাও নয়। জানা গিয়েছে, যে দু’টি স্কিম পিএফ দপ্তরের আওতায় আছে, সেখানেও কাজ চলছে অত্যন্ত ঢিমেতালে।
ইপিএফও কর্তারা জানাচ্ছেন, স্কিমগুলির সুবিধা যাঁদের পাওয়ার কথা, সেই কর্মীদের যেমন পিএফের নির্দিষ্ট ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর বা ইউএএন চালু রাখতে হবে, তেমনই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধারের লিঙ্ক বাধ্যতামূলক। আধারের সঙ্গে সংযোগ থাকতে হবে ইউএএনেরও। পিএফ কর্তৃপক্ষ বারবার এর সময়সীমা বাড়ালেও ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সেই কাজ হয়ে ওঠেনি বলেই জানা গিয়েছে। মোট কথা, স্কিমগুলি এখনও অথই জলে।
কেন্দ্রের এই প্রকল্প যে সফল হওয়ার নয়, অতীতই তার প্রমাণ। কারণ, প্রায় সমগোত্রীয় প্রকল্প করোনাকালে চালু করেছিল কেন্দ্র, নাম ছিল ‘আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনা’। সেই প্রকল্পে বরাদ্দ বাজেটের অর্ধেকও খরচ হয়নি। অন্যদিকে প্রকল্পে আবেদন করা ১৫ লক্ষ কর্মচারীকে কোনও আর্থিক সুরাহাও দেয়নি নরেন্দ্র মোদি সরকার।
চাকরির বাজারের রমরমা তুলে ধরতে প্রতি মাসেই পিএফের তথ্য সামনে আনে কেন্দ্র। কতজন পিএফে নাম লেখালেন, সেই তথ্য হাজির করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, প্রথমবার কতজন চাকরিতে ঢুকছেন, সেই তথ্য যেমন তাতে থাকে না, তেমনই কতজন চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন, তাও জানা যায় না। এই পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র আত্মনির্ভর ভারত রোজগার যোজনার জন্য সত্যিই কতজন চাকরি পেয়েছেন, সেই তথ্য সরকার আজও প্রকাশ করতে পারেনি। এদিকে নতুন স্কিমগুলিও বিশ বাঁও জলে। তা যে দিন শেষে অশ্বডিম্ব প্রসব করবে, তা মনে করছেন অনেকেই।