• কসবার ফ্ল্যাটে শিক্ষিকার গলার নলি কাটা দেহ! সুলোচনা চারির খুনি কে? রহস্য আজও
    বর্তমান | ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • সুজিত ভৌমিক, কলকাতা: ২০১৩ সাল। ক্যালেন্ডারের পাতা তারিখ দেখাচ্ছে ৭ জুলাই। অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা সুলোচনা চারি আছেন কসবার বেদিয়াডাঙায় নিজের ফ্ল্যাটেই। বছর দশেক আগে ছেলেমেয়ে পড়ানো থেকে ছুটি নিয়েছেন। শুরু করেছিলেন সেই ১৯৬৬ সালে। ২৭ বছর... সময়টা কম নয়! ২০০৪ সালে দেশপ্রিয় পার্ক লাগোয়া ন্যাশনাল হাইস্কুল ফর গার্লস পাকাপাকিভাবে ছেড়ে আসার সময় বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়েছিল। এই ক্লাসরুম... বোর্ড... চক-ডাস্টার। এখন শুধুই অখণ্ড অবসর। যোগসূত্র একেবারে ছিন্ন করতে পারেননি। তাই কিছু টিউশনি পড়াতেন। কসবার ফ্ল্যাটেই। ২০০৪ সাল থেকে এটাই রুটিনের মতো। আগের মতো এখন অবশ্য আর পড়াতে পারেন না। বিকেল ৪টে নাগাদ এক ছাত্রীর আসার কথা। কেউ কি আসছে?


    সওয়া চারটে নাগাদ ছাত্রী পৌঁছল ম্যাডামের ফ্ল্যাটে। দরজা বন্ধ। বেল দিতে গিয়েই চমকে উঠল সে। ম্যাডামের চিৎকার! কী ভয়াবহ...। বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিল কিশোরীর। ছুট্টে পালিয়ে গেল সে। সেই স্কুলেরই প্রাক্তন এক সহকর্মীর কাছে ছিল ডুপ্লিকেট চাবি। খবর পেয়ে এসে দরজা খুললেন। ঘরের মেঝে ভেসে যাচ্ছে রক্তে। তার উপরই পড়ে আছেন সুলোচনাদেবী। গলায় গভীর ক্ষত। কে যেন ধারালো কিছু দিয়ে গলার নলিটাই কেটে দিয়েছে। গোটা ঘর লন্ডভন্ড। সুলোচনাদেবীর মোবাইল উধাও। খোঁজ নেই তাঁর প্রিয় ল্যাপটপেরও।


    নিছকই ল্যাপটপ, মোবাইল বা সোনাদানা চুরির জন্যই কি নিরীহ শিক্ষিকা খুন? প্রাথমিকভাবে এটাই মনে হয়েছিল পুলিসের। কিন্তু অদ্ভুতভাবে কোনও ক্লু নেই! স্রেফ চুরি করতে এসে খুনের ঘটনা হলে কোনও না কোনও সূত্র নিশ্চয়ই পাওয়া যেত। তদন্তকারী অফিসার অবাক হলেন। কিছুই যে পাওয়া যাচ্ছে না! সুলোচনাদেবী ছাড়া অন্য কারও হাতের ছাপ নেই। মার্ডার ওয়েপন যে ধারালো কিছু, সেটা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় সেই ওয়েপন? একা থাকতেন সুলোচনাদেবী। ছয়ের দশকের শুরুর দিকে চেন্নাই থেকে কলকাতা চলে এসেছিলেন। তারপর স্কুলে চাকরি। আর এই শহরকেই আপন করে নেওয়া। বিয়ে-থা করেননি। একে একে সূত্র নাড়াচাড়া করতে শুরু করল পুলিস। পাওয়া যাচ্ছে না যে কিছুই! টনক নড়ল লালবাজারের। আসরে নামল হোমিসাইড শাখা। পরিচারিকা, খবরের কাগজের হকার, দুধওয়ালা, এমনকী প্রাক্তন সহকর্মী ওই শিক্ষিকাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করলেন গোয়েন্দারা। কারণ ওই শিক্ষিকা থাকতেন তিন-চারটে বাড়ি পরেই। কিন্তু কোথায় কী?


    শুরু হল খবরের কাগজে লেখা। কে আছে নেপথ্যে? এলাকাজুড়ে চাপা উত্তেজনা। চর্চা। প্রশ্ন একটাই, কেন এই ভয়াবহ খুন? লালবাজারের গোয়েন্দারা একটা বিষয় নিশ্চিত ছিলেন, পরিচিত কেউ ছাড়া এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব নয়। কিন্তু পরিচিত কোনও ব্যক্তিকে জেরা করেই তো উত্তর মিলছে না! কালের নিয়ম... ধীরে ধীরে শিরোনাম থেকে সরে গেলেন সুলোচনা চারি। চায়ের দোকানে তুফান থামল। আর ধুলো জমতে শুরু করল ফাইলে। 


    প্রায় এক যুগ কেটে গিয়েছে। সুলোচনাদেবীর হত্যাকারী আজও অধরা। এখনও কি হাতড়ে চলেছেন কলকাতা পুলিসের গোয়েন্দারা? পেশাদার কোনও চোর নেপথ্যে থাকলেও কিনারা হয়ে যেত। হোমিসাইড, অ্যান্টি বার্গলারি স্কোয়াড, অ্যান্ডি রাউডি স্কোয়াড... একযোগে চালিয়েছিল তদন্ত। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এই কেস সম্পর্কে তাদের বক্তব্য ছিল একটাই—ক্লু-লেস। সাফল্য যে আজও অধরা!
  • Link to this news (বর্তমান)