এই সময়, কোচবিহার: মহিলা খুনে প্রথমে স্বামীকেই সন্দেহ করেছিল পুলিশ। সোমবার সকালে বাড়ি ফিরতেই তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যান তদন্তকারীরা। দুপুর পর্যন্ত জেরা করার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাহলে খুন করল কে? তদন্তকারীদের কপালে তখন চিন্তার ভাঁজ। ইতিমধ্যে খবর আসে ভোর চারটে নাগাদ নিহত মহিলার প্রতিবেশী সঞ্জয় রায়কে ঘর থেকে বের হওয়ার সময়ে অন্য এক ভাড়াটে দেখেছেন। ফের পুলিশের টিম রওনা দেয় কোচবিহারের চকচকায়।
নিজের ঘরে তখনও ঘুমিয়েছিল অভিযুক্ত। দুপুরে ১টা নাগাদ তাকে থানায় তুলে এনে শুরু হয় জেরা। পাশের ঘরে খুন হওয়া সত্ত্বেও তার ঘুমিয়ে থাকার কারণ কী, জানতে চায় পুলিশ। জেরায় সে স্বীকার করে খুনের কথা। সন্দেহ এড়াতে না–পালিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুম লাগিয়েছিল সে। মঙ্গলবার অভিযুক্ত সঞ্জয়কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নিহত মহিলার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনে এই খুন বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষ্ণগোপাল মিনা বলেন, ‘চকচকায় গৃহবধূ খুনে তাঁর পূর্ব পরিচিত, একই বাড়িতে ভাড়া থাকা সঞ্জয় রায় নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। খুনের কারণ জানতে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
চকচকায় মোহনচন্দ্র দাসের তিন তলা পাকা বাড়ি। পাশে আরও একটি বাড়িতে তিন জন ভাড়াটে থাকেন। মাঝে দু’তিন ফুটের রাস্তা। রাত তিনটে নাগাদ খুনের ঘটনা ঘটলেও নিহত অর্পিতার দেড় বছরের শিশুর চিৎকারে সকলে জানতে পারেন ভোর চারটে নাগাদ। খবর দেওয়া হয় তাঁর স্বামীকে। তিনি দিনহাটায় একটি জুট মিলে কাজ করেন। ১০-১২ দিন পরে বাড়ি আসতেন। বাবা-মা ও ভাইকে নিয়ে পাশেই আর একটি ঘরে থাকত সঞ্জয়। পাশাপাশি ঘর হওয়ায় অর্পিতার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। সূত্রের খবর, পুলিশি জেরায় সঞ্জয় জানিয়েছে, অন্যত্র পালিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে সংসার করার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে চাপ দিচ্ছিল অর্পিতা। বারে বারে বুঝিয়েও সমস্যা না মেটায় বাধ্য হয়ে তাকে খুন করেছে।
খুনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ কী ভাবে কিনারা করল? জানা গিয়েছে, সোমবার ভোরে বধূর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে প্রথমে তাঁর স্বামী রবীন্দ্র আর্যকে আটক করা হয়। এরপর আরও তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলে। এর মধ্যেই চকচকা এলাকার ওই ভাড়াবাড়িতে থাকা সঞ্জয় সম্পর্কে একটি তথ্য মেলে পুলিশের কাছে। খুন করে বেরিয়ে আসার সময়ে ওই যুবককে একজন দেখে ফেলেন। এই তথ্য পুলিশের সামনে এলে পুলিশের একটি টিম ফের ওই বাড়িতে যায়। সেই সময়ে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে ছিল সঞ্জয়। রবিবার রাতে মহিলার ঘরে ঢুকেছিল সে। দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর তরকারি কাটার বঁটি দিয়ে অর্পিতার গলা কেটে খুন করে নিজের ঘরে চলে আসে। খুনে ব্যবহৃত বঁটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার অভিযুক্তকে কোচবিহার আদালতে তোলা হলে তাকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজত দিয়েছেন বিচারক।