• এত্তা জঞ্জাল, শিলিগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ যেন নরক
    এই সময় | ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • সঞ্জয় চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি

    লোহার তারজালি দিয়ে ঘেরা জানালার ফাঁক দিয়ে ঝুলছে রক্তমাখা ব্যান্ডেজ। বিশ্রামাগারের কোণায় ছড়িয়ে রয়েছে পানের পিক। ওয়ার্ডের দেওয়ালে কফমাখা থুতু। ওয়ার্ডের বাইরের ফাঁকা জায়গায় জমে রয়েছে ব্যবহার করা ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, ওষুধের খালি প্যাকেটের স্তূপ, ফেলে দেওয়া বিছানার তোষক, চাদর। দোতলায় সিসিইউয়ের বাইরের করিডরে লাইন ধরে প্লাস্টিক পেতে শুয়ে রয়েছেন রোগীর স্বজনেরা। এক ঝলকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে দেখলে নরককুণ্ড ছাড়া অন্য কিছু মনে হওয়া কঠিন।

    বছর দশেক আগে এক বার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ সাফাই করে শিলিগুড়ি পুরসভা। আজ পর্যন্ত মেলেনি সেই বাবদ পাওনা টাকা। বকেয়া না-মেটানোয় মুখ ফিরিয়েছেন পুরকর্মীরা। তার পরে মেডিক্যাল কলেজ চত্বর সাফাইয়ের কাজ শিকেয় উঠেছে। মাঝে মধ্যে রোগীরা চিৎকার-চেঁচামেচি করলে জেসিবি দিয়ে কিছু ময়লা সরিয়ে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই হয় না। কতৃর্পক্ষের কাছে এই বিষয়ে রোগীর পরিজনের খোঁজ নিলে একটাই উত্তর, ‘সাফাইয়ের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। হয়ে যাবে।’

    মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রায় দশ দিন ধরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পড়ে রয়েছেন কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা সত্যনারায়ণ বর্মন। সিসিইউয়ের পাশের দোতালার করিডর তাঁরও ঠিকানা। সত্যনারায়ণ বলেন, ‘এত নোংরা মেডিক্যাল কলেজ যে নরক বললে ভুল হবে না। রাতে দুর্গন্ধে ঘুমোতে পারি না।’ প্রতিদিন স্ত্রীকে দেখতে জলপাইগুড়ির কুকুরজান থেকে মেডিক্যাল কলেজের প্রসূতি বিভাগে আসেন মহম্মদ সরিফুল। হাসপাতালের করিডরের দু’পাশের নোংরা দেখে তিনিও বিরক্ত। সরিফুল বলেন, ‘গরিব মানুষ আমরা। মেডিক্যাল ছাড়া কোথায় যাব? কিন্তু পয়সা থাকলে এখানে আসতাম না। এত নোংরা ভাবা যায় না।’

    অথচ মেডিক্যাল কলেজে খাতায় কলমে শতাধিক সাফাই কর্মী রয়েছেন। প্রতিদিন ওয়ার্ডে ঝাড়ু দেওয়ার কাজটা করেন তাঁরা। ওয়ার্ড থেকে সমস্ত নোংরা জড়ো করে তাঁরাই বাইরে জমা করে দেন। সার কথা বলেছেন এক সাফাই কর্মী। তিনি বলেন, ‘আবর্জনা বাইরে আনার পরে কোথাও তো জমা করব! সেই জায়গাটা কোথায়? আমাদের মেডিক্যাল কলেজে আবর্জনা সাফ করা নিয়ে কারও মাথাব্যথা রয়েছে বলে মনে হয় না। তাহলে আমরা কেন মাথা ঘামাতে যাব?’

    গোটা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, নার্স, জুনিয়র ডাক্তার, গ্রুপ ডি, সকলের এটাই মনের কথা। দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দেবেন, তবু কেউ–ই এ নিয়ে মাথা ঘামাতে চান না। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির কর্তা তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব অবশ্য এ বার চেপে ধরেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। মেয়র বলেন, ‘পুরোনো বকেয়া এখনও পুরসভাকে দেয়নি। সেটা নিয়ে কথা বলব। তবে এ ভাবে মেডিক্যাল কলেজকে আবর্জনার স্তূপ বানানো চলবে না। এখানে একটি সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজ়মেন্ট গড়ে তুলতে হবে। দ্রুত পদক্ষেপ করব।’

  • Link to this news (এই সময়)