• মুখে না, পকেটেও না! পান-গুটখা হাসপাতাল চত্বরে নিষিদ্ধ
    এই সময় | ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • কৌশিক সেন, রায়গঞ্জ

    চরম সমস্যায় পড়েছেন রায়গঞ্জ শহরের বন্দর এলাকার বাসিন্দা নিতাই দাস। বছর তিরিশের এই যুবকের চিন্তার কারণ, মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পান, গুটকা খেয়ে এমনকী সিগারেট ও খৈনি নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যানী সরকারিভাবে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির দায়িত্ব পাওয়ার পরে এই নির্দেশ জারি করেছেন। নির্দেশে বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনও অবস্থাতেই কেউ তামাকজাত জিনিস সেবন করে এমনকী পকেটে নিয়েও হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতে পারবেন না। আর এতেই চিন্তা বেড়েছে নিতাই দাসের মতো অনেকের। এলাকার সাধারণ বাসিন্দারা অবশ্য বিধায়কের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

    আরজি করের ঘটনার পরে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের সেই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। সম্প্রতি সেই দায়িত্ব বর্তেছে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের। সরকারিভাবে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির দায়িত্ব পেয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যানী।

    বিধায়ক বলেন, ‘রাজ্য সরকার এলাকার স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতির জন্য অনেক কাজ করছে। রায়গঞ্জ শহরে মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করা হয়েছে। তবে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হাজার চেষ্টা করলেও একশ্রেণির মানুষ অবিবেচকের মতো হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড নোংরা করছেন। এর আগে আমি রোগী কল্যাণ সমিতিতে ঢোকার পরে এ ব্যাপারে কিছু পদক্ষেপ করেছিলাম। ফলও পাওয়া গিয়েছিল হাতেনাতে। ফের দায়িত্ব পাওয়ার পরে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিষ্কার রাখাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।’

    বিধায়কের কথায়, ‘প্রচুর মানুষ মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন আত্মীয়, পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করতে এসে পান ও গুটকার পিক যত্রতত্র ফেলেন। সিঁড়িতে পোড়া সিগারেটের টুকরো পড়ে থাকে। তাই এ বার থেকে সিগারেটের প্যাকেট, গুটকা, খৈনি মুখে দেওয়া অবস্থায় কাউকে গেট দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না। কেউ পান বা গুটকা খেয়ে রোগীকে দেখতে এলে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ঢুকতে হবে। পকেটে সিগারেট, গুটকার প্যাকেট আনলে গেটে নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে জমা দিয়ে যেতে হবে। কাউকে সন্দেহ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে তল্লাশি করা হবে।’

    একই সঙ্গে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসাধীন রোগীর আত্মীয় ও পরিচিত যাঁরা দেখা করতে আসবেন, তাঁদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ভিতরে যেতে অনুমতি দেওয়া হবে। রোগী প্রতি কার্ড ইস্যু করা হবে। একসঙ্গে দলবেঁধে যাওয়া নিষিদ্ধ। চলতি বছরেই রোগীর পরিজনদের হাতে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিগৃহীত হওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি হাসপাতালের সমস্ত করিডর ও ওয়ার্ড সিসি ক্যামেরার আওতায় আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।

    বিধায়ক আরও জানিয়েছেন, হাসপাতালে ঢোকা ও বের হওয়ার প্রতিটি গেটে ‘কমপ্লেন অ্যান্ড সাজেশন’ বক্স রাখা থাকবে। সাধারণ মানুষের পরামর্শ ও অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রতিমাসে সেই বক্সগুলি খুলে কোনও অভিযোগ বা পরামর্শ থাকলে সমিতির সদস্যরা তা বিচার করে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

    শহরের বাসিন্দা নিতাই দাসের কথায়, ‘নিয়ম চালু হলে তো হাসপাতালে কাউকে দেখতে গেলে মুখ ধুয়ে ঢুকতে হবে। মহা সমস্যায় পড়লাম!’ যদিও শহরের সাধারণ মানুষ নতুন চালু হওয়া এই ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাচ্ছেন।

  • Link to this news (এই সময়)