• ট্রাম বাঁচাতে অভিনব ডেস্ক-টপ ক্যালেন্ডার
    এই সময় | ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • কলকাতার ট্রাম বাঁচাতে বিভিন্ন ট্রাম ডিপোর সামনে সভা, মিছিল, রাজপথে নেমে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, ট্রাম নিয়ে কচিকাঁচাদের অঙ্কন প্রতিযোগিতা হয়েছে। ট্রাম বাঁচানোর দাবিতে পথে নেমেছেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের মতো ব্যক্তিত্ব। কলকাতার ট্রাম নিয়ে নাগরিক সমাজের স্মৃতিমেদুরতার আবহেই শহরের বিভিন্ন রুটে এক সময়ে চলা পুরোনো ট্রামের ছবি নিয়ে ডেস্ক–টপ ক্যালেন্ডার তৈরি করলেন ট্রামপ্রেমীরা। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ট্রাম কন্ডাক্টর রোবের্তো ডি অ্যানড্রিয়ে বহু বার কলকাতায় এসেছেন। নিখাদ ট্রামপ্রেমী রোবের্তোকে কলকাতার ট্রামে চালকের পাশেও বহু বার দেখা গিয়েছে। রোবের্তোর ক্যামেরায় তোলা কলকাতার ট্রামের কিছু ছবি এই ডেস্ক–টপ ক্যালেন্ডারে রাখা হয়েছে।

    কলকাতার যে ট্রাম রুটগুলি এক সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল সেই সব রুটের ট্রামের ছবি রয়েছে এই ক্যালেন্ডারের প্রতিটি পাতায়। গত শতকের সাতের দশকে এসপ্ল্যানেডে রাজপথের পাশে সবুজ বুলেভার্ডের উপর দিয়ে ট্রাম যাচ্ছে––এমন সব বিরল ছবি রয়েছে সেখানে। ১৪ পাতার এই ডেস্ক–টপ ক্যালেন্ডারে ২০২৫–এর সঙ্গে ২০২৬ সালের ক্যালেন্ডারও রয়েছে। একটি ওয়াল–ক্যালেন্ডারও তৈরি করেছেন ট্রামপ্রেমীরা। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে। বইমেলা প্রাঙ্গণে স্বল্পমূল্যে বইপ্রেমীদের হাতে ট্রাম নিয়ে এই ক্যালেন্ডার তুলে দিতে চান ট্রামপ্রেমীরা।

    কেন হঠাৎ ট্রাম নিয়ে ক্যালেন্ডার তৈরি করতে গেলেন? এই ক্যালেন্ডার যাঁর মস্তিষ্কপ্রসূত, সেই ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘আমরা দেখেছি নতুন প্রজন্মও ট্রাম ভালোবাসে কিন্তু পঞ্চাশ বছর আগে শহরের কোন কোন রাস্তা দিয়ে কেমন ট্রাম চলত তা তাঁরা দেখেননি। ফিল্মে কলকাতার ট্রাম রয়েছে, অজস্র পেইন্টিংয়ে রয়েছে, কবিতা–গান–উপন্যাসে রয়েছে। কিন্তু হেরিটেজ ট্রাম নিয়ে ডেস্ক–টপ ক্যালেন্ডার কেউ কখনও করেনি। নতুন প্রজন্মের সামনে হারিয়ে যাওয়া শহরের সেই ট্রাম আমরা তুল‍ে ধরতে চাইছি।’ বইমেলায় না–গিয়েও যাঁরা এই ক্যালেন্ডার সংগ্রহ করতে চান, তাঁরা ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা রেখেছেন ইন্দ্রনীলরা।

    ট্রাম নিয়ে নাগরিক সমাজের নস্ট্যালজিয়া মাথায় রেখে অভিনব ক্যালেন্ডার তৈরির পাশাপাশি হেস্টিংস–খিদিরপুর অঞ্চলের নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের নিয়ে কিছু দিন পরে মিছিলের পরিকল্পনাও করেছেন ট্রাম নিয়ে আন্দোলনকারীরা। উম্পুনের পরে ধর্মতলা থেকে ময়দান হয়ে খিদিরপুরগামী ট্রাম বন্ধ হয়ে যায়। এই ট্রাম–রুটে তথাকথিত যানজটের সমস্যা না–থাকা সত্ত্বেও ২০২০–র পর থেকে আর ট্রাম চলেনি।

    ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক তমাল নন্দ বলেন, ‘খিদিরপুর অঞ্চলের বহু ছেলে–মেয়ে তাঁদের ছোটবেলায় ট্রামে চড়েছেন। ট্রামে ধর্মতলায় এসেছেন। এঁরা অনেক দিন ধরেই ময়দানে ট্রাম ফেরানোর দাবিতে সরব। এঁদের নিয়েই আমরা হেস্টিংস থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত মিছিলের পরিকল্পনা করেছি।’

    ট্রাম নিয়ে হাইকোর্টে এখনও মামলা চলছে। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ সর্বশেষ শুনানিতে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, যেখানে যেখানে ট্রাম–ট্র্যাকের উপরে পিচ ঢেলে (বিটুমিনাইজেশন) দেওয়া হয়েছিল সেখানে পিচ সরিয়ে ট্র্যাক পুনরুদ্ধার করতে হবে। হাইকোর্ট এ জন্যে সময়ও বেঁধে দিয়েছে।

  • Link to this news (এই সময়)