দাম্পত্যে ছলনার ঘটনা নতুন কিছু নয়। স্বামী বা স্ত্রীর যে কোনও এক জনের অন্য জনকে ঠকানো, প্রতারণা করার নিত্যনতুন ছকের কথা জানাও যায়। কিন্তু তা বলে ভবিষ্যতে নাবালিকা কন্যার বিয়ের জন্য এখন থেকেই গয়না করিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা বার বার বলে স্বামীকে একটা কিডনি বেচতে বাধ্য করে তা থেকে পাওয়া নগদ ও নগদের কিছুটা দিয়ে কেনা গয়না নিয়ে ৩৩ বছরের তরুণী বেপাত্তা হবেন প্রেমিকের সঙ্গে! হাওড়ার সাঁকরাইলের ৩৯ বছরের এক ব্যক্তির এমনই অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে।
ওই ব্যক্তি প্রথমে স্ত্রীর নিখোঁজ ডায়েরি করেন এবং তার পর স্ত্রীকে খুঁজে পেতে হাইকোর্টে হেবিয়াস কর্পাস মামলা করেন। এ ক্ষেত্রে মামলাকারীর স্ত্রীকে খুঁজে এনে আদালতে হাজির করানোর কথা। কিন্তু হেবিয়াস কর্পাস মামলায় পুলিশের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, তদন্তকারীদের কাছে ওই মহিলা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন যে, তিনি স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়েছেন।
তাঁর প্রেমিক এবং তিনি এখন স্বামী–স্ত্রীর মতো থাকছেন, কেউ তাঁকে জোর করে কিছু করায়নি। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার, ২৭ জানুয়ারি হেবিয়াস কর্পাস মামলাটি খারিজ করে দেয়। আদালতের বক্তব্য, যেহেতু মহিলার হদিশ পাওয়া গিয়েছে এবং তিনি স্বেচ্ছায় স্বামীকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা মুচলেকা দিয়ে জানিয়েছেন, তাই এই ক্ষেত্রে আর হেভিয়াস কর্পাসের আবেদন কার্যকর হবে না।
তার পর নিজের টাকাপয়সা স্ত্রীর কাছ থেকে আদায় করতে স্ত্রী ও তাঁর প্রেমিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন ওই ব্যক্তি। গত ২৩ ডিসেম্বর সকালে বাড়ি থেকে বাজারে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে সাঁকরাইলের ওই তরুণী আর বাড়ি ফেরেননি বলে তাঁর স্বামী জানিয়েছেন।
তবে আইনজ্ঞদের অনেকের বক্তব্য, গোটা ঘটনায় কিডনি বেচে টাকা পাওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে, যা আইনত দণ্ডনীয় এবং সে ক্ষেত্রে ৩৯ বছরের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বেআইনি কাজের অভিযোগ উঠবেই। তবে আইনজীবীদের অন্য একটি অংশের অভিমত হলো, মামলাকারীকে প্রথম থেকে ভুল বুঝিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। সুতরাং, এখানে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করা ওই ব্যক্তিকে ঘটনার শিকার বলে ধরে নেওয়ার যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে বলে ওই আইনজীবীরা মনে করছেন।
সাঁকরাইলের ওই ব্যক্তি হাইকোর্টে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করেন, তাঁর স্ত্রীকে ব্যারাকপুরের বাসিন্দা এক যুবক ভুল বুঝিয়ে তুলে নিয়ে গিয়েছেন। হাইকোর্টে দায়ের করা অভিযোগে সাঁকরাইলের ওই ব্যক্তি আরও জানান, অভাবের সংসারে বছর বারোর মেয়ের ভবিষ্যতে বিয়ের জন্য এখন থেকেই কিছু গয়না তৈরি করিয়ে রাখার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চাপ দিচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী।
গত বছর অক্টোবরে একজন রোগীর কথা জানিয়ে তাঁকে কিডনি বেচতে ওই তরুণী তাঁর স্বামীকে জোর করেন। তার পর পাঁচ লক্ষ টাকা ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে এবং প্রায় দু’লক্ষ টাকা তাঁর স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে আসে। অভিযোগকারীর আইনজীবী সৌরভ মণ্ডল দাবি করেন, স্বামীকে প্রথমে ভুল বুঝিয়ে তাঁর কিডনি বেচতে একরকম বাধ্য করেন ওই তরুণী। রাজ্য সরকারের কৌঁসুলি রানা মুখোপাধ্যায় পুলিশকে দেওয়া ওই তরুণীর মুচলেকার কপি আদালতে পেশ করেছেন।