• কৃষ্ণগঞ্জে ডিজে বাজিয়ে খোঁড়া হয় বাঙ্কার, দাবি স্থানীয়দের
    এই সময় | ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, কৃষ্ণনগর: বাংলাদেশের সীমান্তে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে বিএসএফ। ফলে প্রচুর ফেন্সিডিল হাতে পেয়েও বাংলাদেশে পাঠাতে পারছিল না পাচারকারীরা। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার মাজদিয়া–নাঘাটা গ্রামে বস্তা বস্তা সেই ফেন্সিডিল মজুত করা হচ্ছিল। শুক্র–শনিবার মাজদিয়ায় যে চারটি বাঙ্কারের খোঁজ মেলে, সেগুলি থেকে ৬২,২০০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করেছিল বিএসএফ। স্থানীয়দের দাবি, ফেন্সিডিল স্টোরেজের জনই চার–চারটে বাঙ্কার তৈরি করেছিল পাচারকারীরা। এই পাচারকারীদের পান্ডা হিসেবে সুশান্ত ঘোষ ওরফে লালের নাম জানতে পেরেছে বিএসএফ এবং পুলিশ।

    খেত–ফলের বাগানে এতগুলি বাঙ্কার তৈরি হলো, অথচ কেউ টের পেলেন না?

    এ প্রশ্নের মুখে ‘আমরা কিছুই জানি না’ বলে পাশ কাটাচ্ছেন স্থানীয়রা। নাম না–প্রকাশের শর্তে তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘ওই এলাকা দুষ্কৃতী ও নেশাড়ুদের আড্ডা। ও দিকে যেতে সাহস হয় না। বাঙ্কারগুলি ৩–৬ মাস আগে তৈরি। তখন প্রায় রোজই ‘পিকনিক’ হতো। জোরে ডিজে বাজত। তারস্বরে গানের আড়ালে মাটি খোঁড়া হয়েছে। ভয়ে কেউই ও দিকে পা বাড়াননি। যে টিনের ঘরের মেঝেতে বাঙ্কার মিলেছে, তার দরজায় সাধারণত তালা ঝুলত। কেউ জানতেই পারেনি, সেখানে বাঙ্কার তৈরি হয়েছে।’

    লাল–বাহিনীর ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাজদিয়ার এক বাসিন্দা বলেন, ‘১৫–২০ জন শ্রমিক এনে বাঙ্কার তৈরিতে ৩–৫ দিন সময় লাগত। বাইরের শ্রমিক আনলে বিষয়টি পাঁচকান হওয়ারও আশঙ্কা ছিল। তাই মেশিন দিয়ে মাটি কেটে দ্রুত বাঙ্কার তৈরি হয়েছিল।’

    গত জুলাইয়ে নদিয়ার ভীমপুরে পাচারের পথে ২০ হাজার বোতল কাফ সিরাপ সমেত কয়েকজন ধরা পড়লে পুলিশ জানতে পারে, কারবারের আসল মালিক লাল। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘অনেক খুঁজেও লালকে পাওয়া যায়নি।’ মাজদিয়ার এক প্রবীণ নাগরিকের কথায়, ‘শুনেছি, লাল বারাণসীতে থাকেন। সেখানকার কোম্পানিতে তৈরি নিষিদ্ধ কাফ সিরাপ এখানে পাঠান। ওঁর শাগরেদরা এ দিকটা সামলান। সাপ্লাইয়ের এই রাস্তার কোথায় কোথায় কড়া নজরদারি, সবটাই ওঁর জানা। ফোনেই সব নিয়ন্ত্রণ করেন। মাঝেমাঝে লুকিয়ে গ্রামে আসতেন।’

    ২৫ বছর আগে পাশের লক্ষ্মীডাঙা গ্রাম থেকে নাঘাটার এই পাড়াতে উঠে আসে লালের পরিবার। বাবা চাষ করতেন। লাল মাজদিয়া কলেজে পড়তেন। ‘ভালো ছেলে’ বলেই সবাই চিনত। পুলিশের দাবি, ধীরে ধীরে চোরাচালানের কারবারে জড়িয়ে পড়েন তিনি। যাঁদের কাছে হাতেখড়ি, তাঁদের পিছনে ফেলে ক্রমে 'বস' হয়ে ওঠেন। রাতারাতি বড় বাড়ি তৈরি করেন। স্থানীয় এক বৃদ্ধ বলেন, ‘বাড়িতে কীর্তনের অনুষ্ঠানে অবাক করার মতো বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করতেন।’

    একবার জেল খেটে ফিরে তিলক–তুলসিমালা–ফতুয়ায় বৈষ্ণব সাজে দেখা গিয়েছিল লালকে। গত বৈশাখে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কীর্তন শুনতে আসা প্রত্যেককে লাল গীতা উপহার দিয়েছিলেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, সুমতি হয়েছে তাঁর। কেউ কেউ তাঁকে লাল মহারাজ নামেও ডাকা শুরু করেছিলেন। কিন্তু, পরিস্থিতি বদলায়নি। যে জমিতে বাঙ্কার, তার মালিকানা স্থানীয় ঘোষ পরিবারের। স্থানীয়দের দাবি, তাদেরই এক শরিক লাল ওরফে সুশান্ত ঘোষ। আবার ওই পরিবারেরই মায়া ঘোষ বলেন, ‘বাঙ্কার গড়ার দোষ চাপানো হচ্ছে লালের নামে। ওকে ফাঁসানো হচ্ছে।’ লালের সহকারি হিসেবে গিরিধর নামেও একজনের কথা শোনা গিয়েছে এলাকায়। তিনি নাকি বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই বাঙ্কার গড়তে জমি ভাড়া দেন।

  • Link to this news (এই সময়)