রেললাইন ধরে উদভ্রান্তের মতো ছুটছে ১০ বছরের এক বালক। তার পিছু পিছু ছুটছেন দুই যুবক। হাতে লাল টুপি অনবরত নাড়িয়ে চলেছেন তাঁরা। উল্টোদিক থেকে তখন একটি মালগাড়ি ছুটে আসছে। ওই বালকের থেকে ট্রেনটি যখন মাত্র ২০ হাত দূরে, সজোরে ব্রেক কষলেন চালক। ‘ক্যাচ ক্যাচ’ আওয়াজ করে থামল মালগাড়ি। লাইনের ধারে এতক্ষণ যাঁরা দম আটকে দাঁড়িয়ে ছিলেন, হাফ ছেড়ে বাঁচলেন তাঁরাও। মঙ্গলবার বিকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা-কেশিয়াড়ি মোড় সংলগ্ন ২৪ নম্বর রেলগেট এলাকায় এই হাড় হিম করা ঘটনাটি ঘটেছে।
জানা গিয়েছে, ওই বালকের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে। হাওড়া-ভুবনেশ্বর জন শতাব্দী এক্সপ্রেস থেকে বেলদা স্টেশনে নামে সে। বেলদায় নেমে বুঝতে পারে, ভুল কোনও স্টেশনে চলে এসেছে। এর পরই লাইন ধরে দৌড়তে থাকে সে। কিন্তু ১০ বছরের বালক একা কোথায় যাচ্ছিল, কী ভাবে এখানে এল, কোনওটাই এখনও স্পষ্ট নয়। জেলা শিশু সুরক্ষা দপ্তরকে খবর দেওয়া হয়েছে। তাকে তাদের কাছেই রেখে বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, ওই দুই যুবক না থাকলে হয়তো বড় কোনও বিপদ ঘটে যেতে পারত। তাঁরা জানান, ওই বালক যখন লাইন ধরে ছুটছিল, ২৪ নম্বর রেলগেটে বাইক নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বেলদার বাসিন্দা অরুণাভ মাইতি। অন্য দিকে রেলগেটে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে ছিলেন বেলদা সংলগ্ন খাকুড়দার বাসিন্দা পূর্ণচন্দ্র রাহুল। তাঁরা দেখেন একটি বাচ্চা ছেলে লাইন ধরে ছুটছে। এ দিকে খড়্গপুরের দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসছে একটি মালগাড়ি।
অরুণাভ, পূর্ণচন্দ্ররা আর কিছু ভাবেননি। তাঁদের একজনের মাথায় লাল টুপি ছিল। সেই টুপি খুলে বালকের পিছু পিছু ছুটতে থাকেন। সেই 'লাল সঙ্কেত' দেখেই মালগাড়ির চালক ট্রেন থামান। রেলের গেটম্যান গৌতম নন্দী বলেন, ‘জনশতাব্দী ট্রেনটি চলে যাওয়ার পরে একটি মালগাড়ির সিগন্যাল হয়। রেলগেট ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি আপ লাইন ধরে একটি বাচ্চা ছুটছে, আর দুই যুবক হাতে লাল টুপি নিয়ে নাড়াতে নাড়াতে তার পেছনে দৌড়চ্ছে। চালক তা দেখতে পেয়ে ট্রেন থামানোয় বাচ্চাটি বেঁচে যায়।’
পূর্ণচন্দ্র জানান, তিনি বাসেই বসে ছিলেন। হঠাৎ দেখেন, একটা বাচ্চা ছুটছে, আর এক যুবক লাল টুপি নেড়ে পিছু পিছু দৌড়চ্ছে। এর পরই বাস থেকে তিনিও নেমে ওই যুবকের পিছু নেন। ওই যুবক লাল টুপি নাড়ছিলেন, আর পূর্ণচন্দ্র দু’ হাত তুলে দৌড়চ্ছিলেন। ওই দুই যুবকের কাজকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলেই। রেল পুলিশ, জেলা প্রশাসন গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখছে।