চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার
কোথাও ৪ বা ৬ কোথাও আবার ৮ অথবা ৯। কোচবিহারের একাধিক প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যাটা ঠিক এমনই। ওই সব স্কুলও প্রধান শিক্ষক চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বটে। কিন্তু যে কোনও দিন স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সেখানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করতে পারল না জেলা শিক্ষা দপ্তর।
সরকারি স্কুলগুলির এই পরিস্থিতি নিয়ে এখন জোর আলোচনা শুরু হয়েছে শিক্ষা মহলে। কোচবিহার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) মৃণালকান্তি রায় সিংহ বলেছেন, ‘কয়েকটি স্কুলে ছাত্রছাত্রী এতটাই কম আছে যে, সেখানে এখন প্রধান শিক্ষক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সমস্ত বিষয়টির উপর নজর রাখা হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়া বাড়লে অবশ্যই সেখানে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। আপাতত যে সমস্ত শিক্ষকরা রয়েছেন, তাঁরাই স্কুল পরিচালনার দায়িত্ব সামলাবেন’।
জেলায় সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮৫৩টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। সেগুলিতে মোট শিক্ষক সংখ্যা ৬ হাজার ৮০৫। জেলায় ১ হাজার ১০৫টি স্কুলে কয়েক বছর ধরেই কোনও প্রধান শিক্ষক ছিল না। টিচার ইনচার্জরাই স্কুলের দায়িত্ব সামলে আসছিলেন। ফলে এক সঙ্গে অতিরিক্ত দায়িত্ব এসে পড়ায় সমস্যায় পড়ছিলেন টিআইসিরা। তাই সার্কেলের মধ্য থেকেই ওই স্কুলগুলিতে সিনিয়ারিটির ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তবে সেটা করতে গিয়েই বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
জেলার একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ১০ থেকে ৪০–এর মধ্যে রয়েছে। তাই প্রথমে একবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, ২০ জনের কম পড়ুয়া থাকলে সেই বিদ্যালয়গুলোতে এক্ষুণি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবে না। পরে আবার ব্যবস্থা বদলে পড়ুয়া সংখ্যা ২০ জনের নিচে থাকলে সেই স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষক নেওয়া হলেও ১০ জনের কম পড়ুয়া থাকা স্কুলগুলোতে আর প্রধান শিক্ষক নেওয়া হয়নি।
শিক্ষা দপ্তরের আশঙ্কা, যা পরিস্থিতি আগামী দিনে এই স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর যে দু’জন শিক্ষক সেখানে রয়েছেন তাঁরাই আপাতত কাজ চালিয়ে নিতে পারবেন। জেলার অন্তত ৬টি স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ১০–এর কম।
তবে এ ব্যপারে সমস্ত বিষয়ের গোপনীয়তা বজায় রেখেছে শিক্ষা দপ্তর। প্রকাশ্যে তারা এ নিয়ে কিছুই বলতে চাইছে না। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান রজত বর্মার কথায়, ‘কিছু পলিসিগত বিষয়ের কথা মাথায় রেখেই ১০–এর কম পড়ুয়া থাকা স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষক দেওয়া হয়নি। আপাতত সেখানে যে দু’জন শিক্ষক রয়েছেন, তাঁরাই স্কুলগুলোর যাবতীয় কাজ সামলাবেন।’