• নাচকে ঘিরেই উত্তরণের স্বপ্ন বুনছেন পম্পি পাল
    এই সময় | ২৯ জানুয়ারি ২০২৫
  • সুদীপ দত্ত

    শিল্পকে ভালোবেসে কেউ সেই চর্চা চালিয়ে যান। কেউ আবার সংসারের চাপে বা সময়ের অভাবে সরে আসেন সেই চর্চা থেকে। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে হেঁটেছেন জলপাইগুড়ির ওডিশি নৃত্যশিল্পী পম্পি পাল। নাচকে ঘিরে তিনি শুধু উত্তরণের স্বপ্নই দেখছেন।

    রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃত্যে স্নাতকোত্তর পম্পি ২০০৮ সালে ভারত সরকারের ‘মিনিস্ট্রি অফ কালচার’-এর স্কলারশিপ পান। শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে ইউজিসি-র ফেলোশিপও পান তিনি। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি-র ‘মেজর রিসার্চ প্রজেক্ট’- এ কাজ করার সুযোগও পেয়ে যান পম্পি।

    সালটা ২০১২। সে বছরেই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নর্থ বেঙ্গল ক্যাম্পাস’- এ অতিথি শিক্ষিকা হিসেবে কাজে যোগ দেন। চাকরি দক্ষিণবঙ্গে হলেও জলপাইগুড়ির সঙ্গে কিন্তু পম্পির কখনও যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি। ২০০৮ সালে জলপাইগুড়িতে তৈরি করেন নৃত্যশিক্ষার প্রতিষ্ঠান— ‘কল্পদীপ’। তারও দু’বছর আগে থেকে তিনি নাচ শেখাতে শুরু করেছিলেন। পম্পির কথায়, ‘সবার পক্ষে তো নিজের শহর ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে নাচ শেখা সম্ভব নয়। তাই ওদের জন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। প্রথম থেকেই চেয়েছিলাম, আমি যা শিখেছি তা জলপাইগুড়ির ছেলেমেয়েরাও শিখুক।’

    ২০০৮ থেকে ২০১৯— এই এগারো বছরে পম্পি বাংলাদেশ, পোল্যান্ড, লন্ডন, ভুটানের ভারতীয় দূতাবাস, এবং বালিতে নৃত্য প্রদর্শন করেছেন। ২০১৮ সালে শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছেন। পম্পি বালি যান ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন (আইসিসিআর)-এর নাচের শিক্ষিকা হিসেবে। ২০১৯-এ বালির ভারতীয় দূতাবাসের অধীন 'স্বামী বিবেকানন্দ কালচারাল সেন্টার’- এ ‘ওডিশি ডান্স টিচার কাম পারফর্মার’ হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি।

    ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পম্পি ফিরে আসেন ভারতে। দেশে ফেরার পরে ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের ধ্রুপদী নৃত্য ‘বালিনিজ়’ আর ওডিশির মেলবন্ধন ঘটান এই শিল্পী। অযোধ্যা আর গুজরাতে এই মিশ্রিত নৃত্যের বেশ কিছু প্রদর্শনও হয়। সেই সময়ে তিনি বালির আই ওয়য়ান দিবিয়ার তত্ত্বাবধানে কোরিওগ্রাফার হিসেবে কাজ করেন।

    ২০২৩ সালে আইসিসিআর আয়োজিত ‘সপ্তম ইন্ডিয়ান রামায়ণ মেলা’ উপলক্ষে বালির একটি দল এবং ‘কল্পদীপ’-এর একটি দল যৌথ ভাবে রামনবমীর দিন অযোধ্যায় নৃত্য প্রদর্শন করে। একই ‘কম্পোজি়শন’ নিয়ে রামমন্দির তৈরি উপলক্ষে ২০২৪- এ নৃত্য প্রদর্শিত হয় দিল্লি, লখনৌ, অযোধ্যা এবং বেনারসে। পম্পি বলছেন, ‘আমিই প্রথম ভারতীয় নৃত্যশিল্পী যে রামমন্দিরে নৃত্য পরিবেশন করেছে।’ তাঁর সংযোজন, ‘চার বছর বয়স থেকে গুরু রুণু ভট্টাচার্যের কাছে তালিম নিয়েছি। তারপরে গুরু পৌষালী মুখোপাধ্যায়ের কাছে ওডিশি শিখি। মাস্টারমশাই বলেছিলেন— কত্থক শিখেছ। এ বার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওডিশি নৃত্য নিয়ে পড়াশোনা করো। জীবনে কখনও তাঁর কথা অমান্য করিনি।’

    ২০২৪ সালে ‘কল্পদীপ’-এর ‘কল্পদীপ উৎসব’ দশ বছরে পা দিয়েছে। ২০২৩-২৪-এ এই উৎসব প্রদর্শিত হয় দিল্লি, কলকাতা, মুম্বই এবং শিলিগুড়িতে। সেই সময়ে শিলিগুড়িতে বালিনিজ় নৃত্যের একটি দলও এসেছিল। প্রতিভাবান শিল্পীদের অনুপ্রাণিত করার পাশাপাশি তাঁদের একটা বড় ‘প্ল্যাটফর্ম’- এ পৌঁছে দেওয়াও এই উৎসবের লক্ষ্য।

    ২০২৪- এ ‘গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র যুবা প্রতিভা পুরস্কার’ পেয়েছেন পম্পি। ভারত সরকারের 'মিনিস্ট্রি অফ কালচার’- এর ‘জুনিয়র ফেলোশিপ' পেয়েছেন এই নৃত্যশিল্পী। বালিনিজ় এবং ওডিশি নৃত্যের তুলনামূলক আলোচনাই এই ফেলোশিপের মুখ্য বিষয়।

    বালির দিনগুলো মনে পড়ে? পম্পি বলেন, ‘প্রতি বছর সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে একবার বালি যাই। সেখানে ওডিশি নৃত্যের তালিম দিই। ২০২২- এ বালির 'জি ২০’- তে ‘ইন্ডিয়ান কম্যুনিটি ইভেন্ট’- এ কোরিওগ্রাফির দায়িত্ব সামলেছি। নাচও ছিল। দেশের টান বড় টান। কিন্তু, আমার এক টুকরো পৃথিবী রাখা আছে বালিতেও।’

  • Link to this news (এই সময়)