শিল্প শহর হলদিয়া, সেখানেই একটি সমবায়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের মুখ দেখলেন বামেদের সমর্থিত প্রার্থীরা। সমবায়ের ভোটাভুটিতে মনোনয়ন পত্র জমাই দিলেন না তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা। রাজ্যে ভোটের ময়দানে এখন বামেরা একেবারেই কোণঠাসা। যে কয়েকটি জায়গায় সমবায় নির্বাচন হচ্ছে সেখানে অধিকাংশ জায়গাতেই জয়ের মুখ দেখছেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। আর কিছু জায়গায় জয়ী হচ্ছেন বিজেপি সমর্থিত প্রার্থীরা। সেখানে হলদিয়ার এই সমবায়ে কেন এমন ছবি?
৭ জানুয়ারি রাজ্য সমবায় নির্বাচন কমিশনের তরফে ‘হলদিয়া কনজিউমার্স কো-অপারেটিভ সোসাইটি’-এর নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি, সোমবার এবং মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার নির্ধারিত দিন ছিল। ভোটগ্রহণ হবে ২ মার্চ। এ দিন বেলা ১২টা পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় ছিল। সমবায় নির্বাচনের অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার আর্যপ্রিয় পাইন জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের পরে ১২টি আসনের জন্য ১৪ জনের মনোনয়ন জমা পড়েছে। বামেদের তরফে দাবি করা হয়েছে, ১৪ জনই তাঁদের সমর্থিত। যে দুইটি অতিরিক্ত মনোনয়ন পত্র জমা হয়েছে, সেগুলি প্রত্যাহার করা হবে। অর্থাৎ ওই নির্বাচনে তৃণমূল বা বিজেপির সমর্থিত কোনও প্রার্থী মনোনয়নপত্রই জমা দেননি।
২০১৬ সালে ওই সমবায়ের শেষ নির্বাচন হয়েছিল, সেখানে তৃণমূল সমর্থিত প্যানেল জিতেছিল। ২০২১ সালে রাজ্য সরকারের তরফে সমবায়ের প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। হলদিয়ার তৃণমূল শ্রমিক নেতা শিবনাথ সরকার বলেন, ‘সমবায়ের সদস্যরাই নির্বাচনে ভোট দিয়ে থাকেন। বাইরের কেউ এই নির্বাচনে যুক্ত থাকেন না। ছোট্ট সমবায়, নির্বাচনে প্রচুর অর্থ খরচ হয়ে থাকে তাই মিউচুয়াল করে নিয়েছে। এর ফলে আমাদের দুর্বল ভাবার কিছু নেই। আমরা প্রায় সমস্ত সমবায় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করছি।’ ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের রাজ্য সভাপতি প্রদীপ বিজলী বলেন, ‘সমবায়গুলির সঙ্গে সরাসরি রাজনীতির যোগ নেই। এর একটা আলাদা ফোরাম আছে। তাঁরা মনে করেছেন প্রার্থী দেওয়ার প্রয়োজন নেই তাই দেননি।’ সিপিএম-এর জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য পরিতোষ পট্টনায়েক জানান, ‘জিততে পারবে না জেনেই প্রার্থী দেয়নি। হলদিয়ার মানুষ বামেদের উপর ভরসা রাখছেন।’
একসময় বামেদের দুর্গ বলে পরিচিত ছিল এই এলাকা। হলদিয়ায় লক্ষ্ণণ শেঠের জমানা এখন অতীত। রাজ্যে পালাবদলের কিছু বছর আগে থেকেই পূর্ব মেদিনীপুর এবং তার অন্তর্গত হলদিয়ায় ঘাঁটি শক্ত হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। তার পরে হলদি নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়ে এখন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। তাঁরই জেলা হলদিয়ার একটি সমবায়ে এমন ঘটনায় শুরু হয়েছে জোর চর্চা।