• কর্পোরেট না পঞ্চায়েত, চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে আমগুড়িতে
    এই সময় | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
  • বাসুদেব ভট্টাচার্য, ময়নাগুড়ি

    প্রথমে দেখে মনেই হতে পারে, এটা কোনও কর্পোরেট অফিস। তাও আবার প্রত্যন্ত গ্রামে। খুব স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে, প্রত্যন্ত গ্রামে কে বা কারা এই অফিস ভবন তৈরি করল! এই অফিসে কী কাজ হয়?

    ভিতরে প্রবেশ করলেই ভুল ভাঙবে সকলের। এটা কোনও কর্পোরেট সংস্থার অফিস নয়, আদতে পঞ্চায়েত দপ্তরের কার্যালয়। ময়নাগুড়ি ব্লকের আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কার্যালয়। ছোটখাটো বাণিজ্যিক সংস্থার অফিসকে টেক্কা দিতে পারে পঞ্চায়েতের এই ভবন৷ বাইরেটা পুরো কাচে মোড়া। রোদ ঠিকরে পড়ছে তার গায়ে। চোখ ঝলসে যাচ্ছে আলোর প্রতিফলনে। স্থাপত্যশৈলীও হালফিলের, পুরোনো ধাঁচের নয়। খাড়া উঠে গিয়েছে কাচের চাদর গায়ে দিয়ে।

    বাইরের চমক ভিতরেও অটুট। মেঝেয় টাইলস পেতে দেওয়া হয়েছে। সেখানেও আলো পিছলে যায়। অফিসের বিভিন্ন জায়গায় আধুনিক আলো ও পাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশ নজরকাড়া প্রধানের ঘর। সেখানেও বাহারি আলোর পাশাপাশি রয়েছে ফলস সিলিং। সব আসবাবপত্র এই ঘরের সঙ্গে মানানসই চাকচিক্যে ভরা। দেখে বোঝা দায়, এটা পঞ্চায়েত প্রধানের ঘর।

    ময়নাগুড়ি তো বটেই, গোটা জলপাইগুড়ি জেলা এমন আধুনিক পঞ্চায়েত কার্যালয় দেখেছে কি না সন্দেহ। অথচ বছরখানেক আগেও ছবিটা ছিল পুরো উল্টো। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত কার্যালয়ে কোনও কাজে এলে রুমাল লাগতই, নাকে চেপে ভিতরে ঢুকতে হতো। আসলে সেই সময়ে এখানে কোনও শৌচাগার ছিল না। বিভিন্ন কাজে আসা মানুষজন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে অফিসের আনাচেকানাচে চলে যেতেন। মহিলাদের জন্য শৌচালয় ছিল স্বপ্নের মতো। কার্যালয়ের ভিতরের অংশ সব সময়ে অপরিষ্কার অবস্থায় থাকত। সারাদিন বসে কাজের একেবারে অযোগ্য।

    ২০২৪ সালের সাধারণ সভায় কার্যালয় সংস্কারের দাবি তোলেন পঞ্চায়েত সদস্য ও এখানকার কর্মীরা। সংস্কারের দাবিতে সিলমোহর পড়ে সেই সভাতেই। এর পরেই ডাক পড়ে আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৎকালীন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস রায়ের। তিনি এই কার্যালয়টিকে আধুনিক মানে গড়ে তোলার প্রস্তাব দেন। সেই অনুযায়ী বিল্ডিং প্ল্যানও করে দেন। মোট নয় লক্ষ টাকা খরচে ভোল বদলে গিয়েছে পঞ্চায়েত কার্যালয়ের। তিন লক্ষ টাকা খরচ করে একটি ঝকঝকে শৌচালয় তৈরি করা হয়েছে সকলের সুবিধার জন্য। দেবাশিস বলেন, ‘ট্রেনিংয়ের সময় আমরা এই ধরনের ডিজ়াইন দেখেছি। তাই আমার মনে হয়েছিল, সেই ধাঁচে এই অফিস গড়ে তোলা যায়। তাই নয়া ডিজ়াইনে অফিস ভবন তৈরি করা হয়েছে।’

    প্ল্যান পাশ হওয়ার পর কাজ হয় দ্রুত গতিতে। চার মাস নির্মাণকাজ চলার পর ২০২৪ সালের শেষের দিকে দাঁড়িয়ে যায় কাচে মোড়া অফিস। পঞ্চায়েত প্রধান দিলীপ রায় বলেন, ‘আগের আর এখনকার অফিসের মধ্যে আকাশ–পাতাল পার্থক্য রয়েছে৷ গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস এমন আধুনিক হতে পারে, এ কথা আমরা ভাবতেও পারিনি।’ গ্রামের মানুষ যাঁরা এখন কার্যালয়ে আসছেন, তাঁরা থ হয়ে যাচ্ছেন। তাঁদেরও চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। আমগুড়ি গ্রামের বাসিন্দা মনোজ ভট্ট, অম্লান কর্মকার, সুশীল সরকাররা বলেন, ‘এই রকম অফিস আমরা শহরে গেলে দেখতে পাই। আমাদের গ্রামে এমন অফিস হবে, সেটা কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি। আমাদের গ্রামের মধ্যে যেন একেবারে শহর উঠে এসেছে।’

  • Link to this news (এই সময়)