নির্জন পথে একাকী নারী সুরক্ষায় ‘ব্রহ্মাস্ত্র’, জুতো আবিষ্কার দশম শ্রেণির ছাত্রের
বর্তমান | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
দীপন ঘোষাল, রানাঘাট:‘জুতো আবিষ্কার’ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে শান্তিপুরের এমএন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির পড়ুয়া হৃত্বিক সাহা। এই জুতো সাধারণ কোনও জুতো নয়। নারী সুরক্ষায় ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ বলছেন অনেকেই। এমন নামকরণের পিছনে মূলত দু’টি কারণ। এক, হৃত্বিকের তৈরি জুতো পরে কাউকে পদাঘাত করলেই তড়িদাহত। দুই, সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলের লোকেশন, অ্যালার্ম পৌঁছে যাবে বাড়িতে। জুতোর এই দুটো বৈশিষ্টই বর্তমান সমাজে নারী সুরক্ষার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে কাজ করতে পারে। এমনটাই দাবি হৃত্বিকের। তাই জুতোটির নাম—‘স্মার্ট শক সু’।
কর্মক্ষেত্র হোক বা নির্জন পথঘাট। নারীদের নিরাপত্তা এখন প্রশ্নের মুখে। সেক্ষেত্রে রক্ষাকবচ হতে পারে ‘স্মার্ট শক সু’। মহিলারা পায়ে গলিয়ে অবলীলায় পথ চলতে পারেন। কেউই টেরও পাবে না। কিন্তু, আক্রমণ করলে সুযোগ বুঝে একটা পদাঘাত। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার মতো মোক্ষম এক ঝটকা। বেসামাল আক্রমণকারী। ততক্ষণে আক্রান্ত মহিলার বাড়িতে পৌঁছে যাবে ঘটনাস্থলের বিবরণ। মোবাইলে জানান দেবে অ্যালার্মও।
ছোট থেকেই মেধাবী হৃত্বিক। ইলেকট্রনিক্সের প্রতি অগাধ আগ্রহ। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা হৃত্বিককে বেশি ভাবিয়েছে নারীদের নিরাপত্তা। সেই ভাবনা থেকেই ‘স্মার্ট শক সু’ তৈরির পরিকল্পনা। তাকে সহযোগিতা করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এ আই। মাত্র ১০ দিনে বানিয়ে ফেলেছে নারী সুরক্ষার জুতো। হৃত্বিক এখন সূত্রাগড়বাসীর অহঙ্কার। মহিলা মহলে আলোচনার মধ্যমণি।
এদিন কথা হচ্ছিল হৃত্বিকের সঙ্গে। সে বলছিল, ‘ভাবনাটা আমার অনেকদিনের। সেই ভাবনায় এআই আমাকে যুতসই সঙ্গত দিয়েছে। তাতেই সাফল্য। মহিলারা রাস্তায় এই জুতো পরে বেরোনো মানে গোপন একটি অস্ত্র কাছে রাখা। নির্জন রাস্তায় হঠাৎ দুষ্কৃতী হামলা হলে আত্মরক্ষায় সেই জুতো ব্যবহার করা যাবে অনায়াসেই। আক্রমণকারীর গায়ে সেই জুতো ঠেকালেই বৈদ্যুতের ঝটকা লাগবে। এ ছাড়াও জুতোই বসানো হয়েছে বিশেষ ধরণের জিপিএস সিস্টেম। তার ডেটাবেস থেকে আক্রান্ত হওয়ার খবর পৌঁছে মহিলার বাড়িতে।
হৃত্বিক জানিয়েছে, জুতোটি তৈরি করতে খরচ পড়েছে মাত্র তিন হাজার টাকা। আপাতত সেটিকে মডেল হিসেবে তুলে ধরতে চায় সে। হৃত্বিক বলছিল, ‘স্কুল থেকে বিভিন্ন প্রজেক্ট বানাতে বলা হয়েছিল। শিক্ষক বলেছিলেন, এমন কোনও জিনিস বানাও যেটা সমাজের কাজে লাগবে। তখন আমি চেষ্টা করি, যাতে নারী নিরাপত্তা নিয়ে কিছু করা যায়। জুতোর সঙ্গে একটি অ্যাপও ডেভেলপ করা হয়েছে। সেই অ্যাপের মাধ্যমে জুতোটিতে থাকা সফটওয়্যার সিস্টেমকে জুড়ে দিলেই তার সমস্ত বিশেষত্ব ব্যবহার করা সম্ভব। যিনি জুতোটা পরবেন তিনি ওই অ্যাপের মাধ্যমে তাঁর পরিবারের একজনের ফোন নম্বর এবং ঠিকানা দিয়ে রাখলেই মেসেজ চলে যাবে।
অল্প বয়সেই ছেলের এই আবিষ্কার নিয়ে আপ্লুত হৃত্বিকের পরিবার। মা কল্পনা সাহা বলেন, ‘আমি চাই ছেলে অনেক বড় জায়গায় যাক। ওর আগ্রহ দেখে সত্যিই আমরা অবাক হই। অনেক ছোটবেলা থেকেই হৃত্বিক ইলেকট্রনিক্স জিনিসের প্রতি আগ্রহী। স্কুলের প্রজেক্টের কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ সে জুতো বানিয়ে ফেলেছে দেখে আমরাও হতবাক। আশা করছি, সমাজের এই ধরনের জুতো কাজে লাগবে।’