রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: চারিদিকে বইয়ের সমারোহ। তারই মাঝে এক এক অন্য জগৎ। বইমেলাতেই আস্ত এক ‘বটতলা’! সেই বটতলায় বসেই এক মনে হাত চলছে এক শিল্পীর। বাটালির উপর আস্তে আস্তে হাতুড়ির ঘা। সেই ম্যাজিক স্পর্শেই সেজে উঠছে কাঠের নানা ছাঁচ... মাছ, প্রজাপতি, শঙ্খ, জলভরা। আজকের প্রজন্ম তো জানেই না, সেই ছাঁচে ক্ষীর কিংবা চিনি-নারকেলের পাক ভরে কীভাবে তৈরি হয় মনমাতানো সব মিষ্টি!
বঙ্গবাসীর পার্বণ তালিকায় পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে বইমেলা। কিন্তু মাসের শেষ হওয়ার মুখে মেলা শুরু হওয়ায় বিক্রিবাটা নিয়ে শঙ্কা তো ছিলই। যদিও বুধবার বিক্রেতাদের হতাশ করেনি বইমেলার দ্বিতীয়া। অন্যান্য প্রকাশনার পাশাপাশি কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টলটির উদ্বোধন হল এদিন। হাজির ছিলেন উপাচার্য কল্লোল পাল। দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণ ফাঁকা থাকলেও বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই ভিড় জমল স্টলে স্টলে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের পাশাপাশি অফিস ফেরতা পাবলিকও ছিল সেই ভিড়ে। বাবা-মায়ের হাত ধরে মেলায় এসেছে অনেক কচিকাঁচা। এবারও বইমেলার জন্য বিপুল সংখ্যায় বাস চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। ইস্ট-ওয়েস্ট রুটে মেট্রোর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ফলে মেলায় আসতে সমস্যা হয়নি বয়স্কদের। সব মিলে সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গন কার্যত জনঅরণ্য। এত ভিড়ের মধ্যেও অনেকের নজর কেড়েছে ‘বটতলা’। বইমেলার তিন নম্বর গেট থেকে সোজা যে রাস্তা চলে গিয়েছে তার নাম ইঙ্গেবর্গ বাখম্যান সরণি। এই পথ ধরে সোজা এগিয়ে গেলে থিম কান্ট্রি জার্মানির প্যাভিলিয়ন। তার উল্টো দিকের মাঠে চলছে উনিশ শতকের খোদাই চিত্র প্রদর্শনী। গ্যালারির দেওয়ালে ছবিতে তুলে ধরা হয়েছে বাংলায় মুদ্রণের ইতিহাস। ১৭৭৮ সালে প্রথমবার বাংলা হরফ ছাপা হয়েছিল কোনও বইতে। হুগলির ত্রিবেণীতে ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেই প্রেস। ১৮১৮ সালে বাংলা বইতে স্থান পায় ছবি। কাঠের উপরে খোদাই করা ব্লকের মাধ্যমে চলত সেই মুদ্রণ। তেমন কয়েকটি ব্লকও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। এসবের মাঝেই চোখ আটকে যেতে বাধ্য প্রদর্শনীর এক কোণে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বইমেলা বটতলা’। সেখানে বসে কাঠের ছাঁচ তৈরি করছেন সিঁথির বাসিন্দা শিল্পী উজ্জ্বল দাস। জানালেন, গত প্রায় চার দশক ধরে এই কাজ করছেন। শহরে নিজের দোকানও রয়েছে। কিন্তু এবার বইমেলায় হাজারো মানুষের সামনে নিজের শিল্পকর্ম তুলে ধরতে পেরে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত তিনি।