• মা ফ্লাইওভারে স্পিডক্যামের নজরে পুলিসের গাড়ি, জরিমানা ৩ হাজার
    বর্তমান | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
  • স্বার্ণিক দাস, কলকাতা: ‘যত আইন আমাদের জন্য! ওরা তো পুলিস। ট্রাফিক আইন না মানলে ওদের কিছু যায় আসে না।’ রাস্তাঘাটে এমন হা-হুতাশ একটু কান পাতলেই শোনা যায়। পুলিস যে বিভিন্ন সময় তাদের সহকর্মীর ‘ছোটখাটো’ অনিয়ম মাফ করে দেয়, তাও সবার জানা। কিন্তু প্রযুক্তিকে যে কোনওভাবে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়, সম্প্রতি মিলল তার প্রমাণ। কলকাতার মা ফ্লাইওভারে সর্বোচ্চ গতিসীমা লঙ্ঘনের জন্য জরিমানার কোপে পড়ল খোদ কলকাতা পুলিসের গাড়ি। একবার নয়, তিনবার। সৌজন্যে লালবাজারের তরফে বসানো স্পিড সেন্সিং ক্যামেরা। 


    গত বছরের শেষের দিকে কলকাতা পুলিসের ট্রাফিক বিভাগের এক অফিসারের গাড়ির ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটে। অফিসের জরুরি প্রয়োজনে মা ফ্লাইওভার ধরে যাচ্ছিলেন ওই অফিসার। চালককে তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছনোর নির্দেশ দেন। পুলিসের চাকরিতে সময় মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণও বটে। সাহেবের নির্দেশ মেনে ফাঁকা ফ্লাইওভারে দিয়ে দ্রুতবেগে গাড়ি ছোটাতে শুরু করেন চালক। গন্তব্যে পৌঁছনোর আগেই ওই অফিসারের কাছে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পৌঁছে যায় জরিমানার মেসেজ। তাতে জানিয়ে দেওয়া হয়, মা ফ্লাইওভারে গতিসীমা লঙ্ঘনের জন্য ১০০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে সরকারি গাড়িটিকে।


    এখানেই শেষ নয়! একইভাবে ডিউটির স্বার্থে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে একবার মা ফ্লাইওভারে, পরে আরও একবার এ জে সি বোস রোড ফ্লাইওভারে বেকবাগানের কাছে জরিমানার কোপে পড়ে ওই একই গাড়ি। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে তিনবার গতিসীমা লঙ্ঘনের দায়ে পড়ে পুলিসের ওই বাহন। জরিমানার মোট পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় তিন হাজারে। সূত্রের খবর, গত লোক আদালতে সেই জরিমানা মিটিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের ওই অফিসার। লোক আদালতের নিয়ম অনুযায়ী, সেখানে জরিমানার টাকা মেটালে পাওয়া যায় ৫০ শতাংশ ছাড়। সেই মতো জরিমানার অঙ্ক দাঁড়ায় দেড় হাজারে। জরিমানা মিটিয়ে তিনটি কেস সরকারি খাতা থেকে সরিয়েছেন ওই অফিসার। ট্রাফিক পুলিসের ওই অফিসারের বক্তব্য, ‘আমাদের কাজের জন্য অনেক সময়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে হয়। তদন্ত বা অন্য কোনও প্রয়োজনে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও বটে। যেমন, কোথাও পথ দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের হাতে সময় কম থাকে। সেক্ষেত্রে দ্রুত ঘটনাস্থলে না পৌঁছতে পারলে জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দিতে পারে দুর্ঘটনাগ্রস্তদের। তবে ট্রাফিক বিধিলঙ্ঘন উচিত নয়। আমার চালককে বলে দিয়েছি, জরুরি প্রয়োজন হলেও গতিসীমা লঙ্ঘন করা যাবে না।’ লালবাজারের এক পদস্থ কর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাধারণ মানুষ অনেক সময় ভাবেন, পুলিস বোধ হয় এসব আইনের ঊর্ধ্বে। কিন্তু মোটেও তা নয়। স্পিড ক্যামেরার প্রযুক্তিটাই এমন যে গতিসীমা লঙ্ঘন করলে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জরিমানার মেসেজ চলে যাবে। সেই গাড়ি কার বা কে চালাচ্ছিলেন, এসব বিবেচ্য হবে না।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)