• সভাপতি নেই, বন্ধ পড়ে পার্টি অফিস
    এই সময় | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
  • অশীন বিশ্বাস, ব্যারাকপুর

    দল রাজ্যের শাসন ক্ষমতায়। অথচ প্রায় এক বছর হতে চলল সভাপতি নেই ব্যারাকপুর–দমদম সাংগঠনিক জেলায়। বেশিরভাগ সময়ে তালাবন্ধ হয়ে পড়ে থাকে তৃণমূলের জেলা অফিস। ফলে দলের কর্মীদের কোনও সমস্যা নিয়ে জেলা অফিসের পরিবর্তে ছুটতে হয় নেতাদের দরবারে। যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ দলেরই নিচুতলার কর্মীরা। তাঁরা চান দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নতুন সভাপতির নাম ঘোষণার পাশাপাশি দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটির নামও ঘোষণা করুন।

    ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা কমিটি ভেঙে চারটি সাংগঠনিক জেলায় ভাগ করা হয়। যার একটি ব্যারাকপুর-দমদম সাংগঠনিক জেলা। যার প্রথম সভাপতি হন নৈহাটির তৎকালীন বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। পরে তিনি মন্ত্রী হওয়ার পর দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘এক পদ এক নীতি’র ভিত্তিতে তাঁর জায়গায় সভাপতি হন বরাহনগরের তৎকালীন বিধায়ক (বর্তমানে বিজেপি নেতা) তাপস রায়। নতুন সাংগঠনিক জেলা তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিটাগড় টাটা গেটের কাছে নতুন জেলা অফিসও তৈরি করা হয়। যেখানে প্রতিদিন নিয়ম করে দলের সভাপতি হোক কিংবা ছাত্র, যুব, মহিলা, শ্রমিক সংগঠন হোক কিংবা এসসি–এসটি সেলের সভাপতি–সহ দলীয় নেতারা বসতেন। দলের কর্মী থেকে সাধারণ মানুষের অভাব অভিযোগ তাঁরা শুনতেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেন।

    কিন্তু সে সব এখন অতীত। গত বছর লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে ৪ মার্চ তৃণমূলের সভাপতি তাপস রায় বিজেপিতে যোগ দেন। তার পর থেকেই ফাঁকা তৃণমূলের ব্যারাকপুর–দমদম সাংগঠনিক জেলা সভাপতির পদ। শুধু তাই নয়, সাংগঠনিক জেলার বয়স প্রায় চার বছর হতে চললেও, আজও জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হয়নি। যার কারণে টাউন, ওয়ার্ড, ব্লক, বুথ স্তরে কোনও কমিটি গড়া সম্ভব হয়নি। পুরোনো কমিটিই কাজ চালাচ্ছে। যা নিয়ে শাসকের অন্দরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যেখানে দল ক্ষমতায় সেখানে সব কিছু কেন সিস্টেমিক হবে না?

    তাঁদের আরও প্রশ্ন, বছর ঘুরলেই যেখানে বিধানসভা নির্বাচন সেখানে এখন থেকেই কেন দল একেবারে নিচুতলা থেকে সংগঠন প্রস্তুত করবে না? এ প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে, দলের যে সমস্ত নেতার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে, মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা একেবারে তলানিতে তাদের কেন সামনের সারিতে রাখা হবে?

    জেলা অফিসে মাঝেমধ্যে শাখা সংগঠনগুলির দু–একটা মিটিং হলেও সেগুলিও এখন ঠিক মতো হয় না। টিটাগড়ের প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রশান্ত চৌধুরী মাঝেমধ্যে জেলা অফিসের তালা খুলে বসেন, ওই পর্যন্তই। দলীয় কর্মীদের কোনও ভিড় থাকে না। এক্ষেত্রে বলাই বাহুল্য, সভাপতিহীন ব্যারাকপুর ও দমদম লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে তৃণমূল। এমনকী জেলা কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা না থাকা সত্ত্বেও গত পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে শাসক দল। দেখা গিয়েছে সভাপতি না থাকলেও দল শুধু নয়, জেলার কর্মীরাও পার্থ ভৌমিকের উপরেই ভরসা রেখেছেন। সেই ভরসার উপরে ভর করে অর্জুন সিংয়ের মতো নেতাকে হারিয়ে কর্মীদের মনোবল তিনি বাড়িয়েছেন।

    ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘সভাপতি না থাকলেও আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। সমন্বয়ের অভাবও নেই।’

  • Link to this news (এই সময়)