দিব্যেন্দু সরকার ■ গোঘাট
ভবনের সামনে লেখা ‘সর্বশিক্ষা মিশন'। তবে শিক্ষার কোনও নাম-গন্ধ নেই। ক্লাসরুম অতীত। দরজায় ঝুলছে তালা। বারান্দায় যেখানে টিফিনের সময় কচিকাঁচাদের হুল্লোড় হওয়ার কথা, সেখানে শুকোয় শাড়ি, সোয়েটার, কম্বল। স্কুল চত্বর গরু–ছাগল, হাঁস, মুরগির অবাধ বিচরণক্ষেত্র। গৃহস্থালির দখলে স্কুল বারান্দা। বাঁচোয়া ঘরগুলোতে তালা লাগানো, না হলে হয়তো তা–ও দখলে চলে যেত! স্কুল ভবনের সামনে একটা ছোট্ট মাঠ। সেখানে ধান শুকোতে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গরু-ছাগলকে ঘাস খাওয়াতেও নিয়ে যান অনেকে।
না, বহু দিন আগের কোনও স্কুল নয়। তৃণমূল সরকারের আমলে শুরু হওয়া স্কুলের এক দশকের মধ্যেই এই হাল। শিক্ষক–শূন্য স্কুলে ঝুলছে তালা। ২০১২ সালে ঘটা করে নতুন উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সূচনা হয়েছিল গোঘাটের শ্যামবাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের পাণ্ডুগ্রামে। স্কুলের নাম পাণ্ডুগ্রাম উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়। লাগোয়া বেশ কয়েকটি গ্রামের পড়ুয়ারা ওই স্কুলে পড়তে যেত। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে সরকারি ভাবে দেওয়া হয়েছিল দু'জন শিক্ষক। এ ছাড়াও পড়ুয়াদের সুবিধার্থে গ্রামের ক্লাবের কয়েকজন শিক্ষিত ছেলে বিনা পারিশ্রমিকে স্কুলে পড়াতেন ও অন্যান্য কাজও করতেন। এক দশকের মধ্যেই দু-এক বছরের ব্যবধানে দুই শিক্ষক–শিক্ষিকা অবসর নিয়েছেন। নতুন করে কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা আর নেই স্কুলে। স্থানীয় ক্লাবের শিক্ষিত যুবকরাও আর স্কুলে যান না।
নতুন শিক্ষাবর্ষের আগেই এই স্কুলের পড়ুয়াদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে অন্য স্কুলে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে থেকে শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষ। কিন্তু স্কুলে এখনও ঝুলছে তালা। তা–ও স্থানীয়দের আশা, নতুন ভাবে শিক্ষক নিয়োগ হলে আবারও হয়তো স্কুল খুলবে। স্কুল পরিচালন কমিটির এক সদস্যের ব্যাখ্যা, সরকারি নিয়োগে জটিলতা থাকায় নিয়োগ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকরাও হারাচ্ছেন আস্থা। কোন ভরসায় ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাবেন? তাই সময় থাকতে থাকতেই পার্শ্ববর্তী শ্যাম বাজার হাইস্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন ছেলেমেয়েদের। স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল আচার্য, সাবিত্রী রায়, জয়দেব রায়–সহ অন্যান্য অভিভাবকদের বক্তব্য, যে স্কুলে শিক্ষকই নেই, সেখানে কে পড়াবেন ছাত্রছাত্রীদের? কে–ই বা স্কুলের সার্বিক দায়িত্ব নেবেন?
স্থানীয় শ্যামবাজার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রভাত গোস্বামী বলেন, ‘সরকারি নিয়মের গেরোয় স্কুল বন্ধ। স্কুল ভবনের ভবিষ্যৎ কী, আমরা এখনও জানি না। পুরো বিষয়টি জানাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।’
হুগলি জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘আমি পুরো বিষয়টি শুনেছি। আসলে এটা এসএসকে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের অধীন। কেন্দ্রের উদাসীনতা ও গাফিলতির কারণেই স্কুলগুলির এই হাল। আমরা এই সমস্ত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনস্থ স্কুলগুলিতে ভর্তি করানোর কথা বলেছি। তবে বিল্ডিংগুলিকে ভালো কাজে লাগানোর জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’