• তীর্থস্থানে ঘোরাই ছিল নেশা, ধর্মপ্রাণ উর্মিলার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা গ্রাম
    এই সময় | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
  • সংসারের খুঁটি ছিলেন তিনি। ৭৮ বছর বয়সেও সব কাজ এক হাতে সামলাতেন। একটাই শখ ছিল, সময় পেলেই তীর্থে যাওয়ার। সেই শখ যে এ ভাবে মৃত্যু ডেকে আনবে ভাবতেই পারেননি মেদিনীপুরের ভুঁইয়া পরিবার। মহাকুম্ভে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে শালবনির বাসিন্দা উর্মিলা ভুঁইয়ার। মাকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ ছেলে, মেয়ে, জামাইরা। সকলেই বলছেন, ‘মাথার উপর থেকে ছাদ সরে গেল।’

    সোমবার ভোরে দুই মেয়ে, দুই জামাই-সহ পরিজনদের সঙ্গে খড়্গপুর স্টেশন থেকে প্রয়াগরাজের উদ্দেশে রওনা দেন শালবনীর ধর্মপ্রাণ প্রৌঢ়া উর্মিলা ভুঁইয়া। সাত সকালেই ট্রেন থেকে নেমে প্রয়াগরাজ স্টেশন থেকে হেঁটে মহাকুম্ভে পৌঁছন বিকেল নাগাদ। আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের আশ্রমে। তারপরই বহু বছরের লালিত স্বপ্ন সফল করতে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব (পুণ্যস্নান) দিতে কাকভোরে বেরিয়ে পড়েছিলেন মেয়ে-জামাইদের সঙ্গে। কয়েক মুহুর্ত পরেই ঘটে যায় সেই বিপর্যয়।

    স্থানীয়রা বলছেন, ‘খুব ভালো মানুষ ছিলেন। নিজের ধর্ম-কর্ম নিয়ে থাকতেন। সুস্থ-সবলও ছিলেন। উনি যে ফিরে আসতে পারবেন না আমরা ভাবতেও পারিনি।’ ছেলে দুলাল ভুঁইয়া জানান, ইতিমধ্যেই পুরী, গঙ্গাসাগর-সহ দেশের বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান ও তীর্থক্ষেত্র ভ্রমণ করে এসেছেন তিনি।

    ছেলে বলেন, ‘তীর্থক্ষেত্রে বেড়াতে খুব ভালোবাসতেন। তিন-চার মাস আগে আমার ছোট জামাইবাবু (খড়্গপুরের বাসিন্দা কমল মাইতি) মহাকুম্ভে যাওয়ার কথা বলেন। মায়ের খুব ইচ্ছে ছিল। দিদি-জামাইবাবুকে বললাম, ঠিক আছে তাহলে মায়ের টিকিট কেটে নিন। পুরী, গঙ্গাসাগর এতবার গিয়েছেন। ভাবতে পারিনি মহাকুম্ভ থেকে আর ফিরতে পারবেন না।’

    মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই কাছারিরোডের বাড়িতে ভিড়। পৌঁছেছেন বিধায়ক সুজয় হাজরা, বিডিও রোমান মণ্ডল, আইসি সৌরভ ঘোষ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহ। বিডিও বলেন, ‘সকাল সাড়ে ছ'টায় অ্যাম্বুল্যান্স বেনারস অতিক্রম করেছে। আমরা সব সময় যোগাযোগ রাখছি। পরিবারের পাশে আছি।’ পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বিধায়ক সুজয় বলেন, ‘এত মানুষের সমাগম! যোগী সরকার ব্যর্থ। অনেক বেশি সচেতন হওয়ার প্রয়োজন ছিল।’ ধর্মপ্রাণ উর্মিলা দেবীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা গ্রামও।

  • Link to this news (এই সময়)