• প্রথমবার নয়, আগেও হারিয়েছে ছবির অরিজিনাল প্রিন্ট
    এই সময় | ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
  • দেবলীনা ঘোষ

    কুণাল সেন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন তাঁর বাবা মৃণাল সেনের তৈরি বারো পর্বের সিরিজ় ‘কভি দূর কভি পাস’-অরিজিনাল টেপ খোয়া গিয়েছে দূরদর্শনের আর্কাইভ থেকে। সেই সূত্র ধরেই তাঁকে প্রশ্ন করলে কুণালের জবাব, ‘এটা নতুন কোনও ব্যাপার নয়। এ রকম অনেক ছবিই নেই। বাবার কাছে বেশিরভাগ ফিল্মেরই কপিরাইট ছিল না। এই সিরিজ়টারও কপিরাইট বাবার নয়। হাই রেজ়োলিউশন ম্যাগনেটিক টেপ ছিল দূরদর্শনের কাছে। সিরিজ়টা একবার দেখানোর বছরখানেক বাদে বাবা চেয়েছিলেন।

    জানা যায়, টেপটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ভিতর থেকে খবর পাই, কোনও অফিশিয়াল স্টেটমেন্ট অবশ্য নয়, যে দূরদর্শন পুরোনো টেপ রিইউজ় করে। ফলে ওই টেপের উপরে অন্য কিছু রেকর্ড করা হয়ে গিয়েছে সেটাই স্বাভাবিক।’

    এই সিরিজ়টা তৈরির পরপরই কুণাল আমেরিকা চলে যান। মৃণাল সেন তাঁকে ভিএইচএস টেপ পাঠান সিরিজ়টি দেখার জন‍্য। ‘আমি বছর তিনেক আগে সেই ভিএইচএস কপিগুলো খুঁজে পাই। কোয়ালিটি খুব একটা ভালো ছিল না। বাড়িতেই ডিজিটাইজ় করি। তার পরে ইউটিউবে আপলোড করে দিই। যদিও সিরিজ়টির কপিরাইট আমার ছিল না। কেউ আপত্তি জানালে সরিয়ে দেবো ভেবে রেখেছিলাম। এরপর ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা বলে যে ভালো করে ডিজিটাইজ় করে দেবে। আমি ভিএইচএস টেপগুলো কুরিয়ার করি।’

    তার পরেই শুরু হয় সমস্যা। বছর খানেক ধরে কাস্টমস-এই আটকে আছে সেই টেপ। যত দিন যাচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে আর পাওয়া যাবে না সেগুলো। হারিয়েই গিয়েছে সেখান থেকে। কুণাল যোগ করেন, ‘এই প্রথমবার এ রকম হয়নি। বাবা যখন ‘চালচিত্র’ ছবিটা তৈরি করেছিলেন রিলিজ়ের আগেই কোনও একটা বিদেশি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটা পাঠানোর তাড়া ছিল। সাধারণত এই সব ক্ষেত্রে ডিউপ টেপ পাঠানো হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়োর কারণে অরিজিনাল নেগেটিভটাই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একটা প্রিন্ট করানো ছিল টেপটার। কিন্তু ওই অরিজিনাল নেগেটিভটা আর পাওয়া যায়নি। কলকাতা কাস্টটমস-এ হারিয়ে গিয়েছে। একটা প্রিন্ট ছিল বলে মানুষ দেখতে পেয়েছেন ছবিটা।’

    ‘কভি দূর কভি পাস’-এর যে লিঙ্কটি ইউটিউবে রয়েছে, সেখান থেকেই একমাত্র দেখা যাবে এই বারো পর্বের সিরিজ়টি। ছবিগুলো রেস্টোর করার উপায় কী তা হলে? কুণালের জবাব, ‘বাবা খুব কম ছবি প্রোডিউস করেছেন। কিছু ছবির রাইট পরবর্তীকালে আর্থিক কারণে বিক্রিও করে দিয়েছেন। ৯৫ শতাংশ ক্ষেত্রে বাবার ছবির প্রোডিউসাররা আর বেঁচে নেই। ১৫-১৬টা ছবি আছে ন্যাশনাল ফিল্ম আর্কাইভ-এর কাছে। কোনও সংস্থা ছবিগুলো দেখাতে চাইলে তারা অনুমতি পায় না। তাদের বলা হয় যে প্রোডিউসারের অনুমতি লাগবে। আর প্রোডিউসারকে খুঁজে পাওয়া যায় না। অনেক ক্ষেত্রে আমাকে কেউ অ্যাপ্রোচ করলে আমি বলি যে উত্তরাধিকারি হিসেবে আমি অনুমতি দিচ্ছি। তবে কোনও ফেস্টিভ্যাল বা কোনও ইউনিভার্সিটিতে দেখানোর অনুমতি পাওয়া যায়। কমার্শিয়াল পারপাসে নয়। ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও ছবিগুলো রাখা সম্ভব নয়, কারণ কপিরাইট আমাদের নয়।’

    কপিরাইট-এর বিষয়ে বিশদে না জানা থাকলেও কুণালের বক্তব্য, ‘আমি যতদূর জানি, ছবি মুক্তির ৫০-৫৫ বছর পর আর কপিরাইট থাকে না। বিস্তারিত জানতে হবে আমাকে। তার পরে ছবিগুলো যাতে বেশি সংখ্যক দর্শকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় সেই ব্যবস্থা করব।’
  • Link to this news (এই সময়)