GBS-এ এবার কলকাতাতেও মৃত্যু, কী এই গুলেইন বারি সিনড্রোম ও কীভাবে বাঁচবেন?
আজ তক | ৩১ জানুয়ারি ২০২৫
দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া রহস্যময় রোগ গুলেইন বারি সিনড্রোম (GBS) এবার কলকাতাতেও প্রাণ কাড়ল এক ১৭ বছরের কিশোরের। এর আগে পুনেতে এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। পুনে জেলায় ইতিমধ্যেই ১২৭টি সংক্রমণের ঘটনা সামনে এসেছে, যা উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রোগের নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি, এমনকি এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত চিকিৎসা পদ্ধতিও নেই। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারও সতর্কতা জারি করেছে।
গুলেইন বারি সিনড্রোম কী?
গুলেইন বারি সিনড্রোম হল একটি অটোইমিউন নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজেই স্নায়ুতন্ত্রের উপর আক্রমণ চালায়। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েন, হাঁটা-চলা, বসা বা শ্বাস নেওয়ার মতো সাধারণ কাজেও অসুবিধার সম্মুখীন হন। কিছু ক্ষেত্রে রোগীর পক্ষাঘাতগ্রস্ত (paralyzed) হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
এই রোগ মূলত শরীরের পেরিফেরাল নার্ভাস সিস্টেমকে (Peripheral Nervous System) আক্রমণ করে। সাধারণভাবে, হাত ও পায়ে ঝিনঝিনি ভাব, দুর্বলতা এবং পেশির ব্যথা দিয়ে শুরু হলেও, এটি দ্রুত সম্পূর্ণ শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং রোগীকে ভেন্টিলেশনে রাখার প্রয়োজন হতে পারে।
এই রোগের লক্ষণ কী কী?
GBS রোগীদের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সাধারণ উপসর্গ দেখা যায়—
হাত-পা দুর্বল হয়ে যাওয়া
শরীরে ঝিনঝিনি ভাব বা অসাড়তা
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে সমস্যা
কথা বলা, চিবানো বা খাবার গিলতে অসুবিধা
চোখ নড়াচড়া করতে সমস্যা
প্রস্রাব ও মলত্যাগে সমস্যা
শ্বাস নিতে কষ্ট এবং রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া
কীভাবে এই রোগ সংক্রমিত হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাইরাল সংক্রমণ থেকে এই রোগ দেখা দিতে পারে। সাধারণ জ্বর, কাশি, ডায়রিয়া বা অপুষ্টি থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এই সিনড্রোমের শিকার হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
পুনেতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার পেছনে নোংরা জল এবং বাসি খাবার দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে একটি নির্দিষ্ট কূপের জল এই সংক্রমণের উৎস বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মহারাষ্ট্র সরকার ইতিমধ্যেই বাসি খাবার এবং অপরিষ্কার জল পান না করার পরামর্শ দিয়েছে।
কীভাবে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব?
এই রোগ থেকে বাঁচতে সাধারণ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা যেতে পারে—
✔ পরিষ্কার ও ফুটানো জল পান করুন
✔ বাসি খাবার এবং বাইরের খাবার এড়িয়ে চলুন
✔ ভাইরাল সংক্রমণ থেকে সাবধান থাকুন
✔ সর্দি-কাশি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
✔ দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার সতর্কতার সঙ্গে সংরক্ষণ করুন
এই রোগ কতটা ভয়ংকর?
ভালো চিকিৎসা পেলে ৭০-৮০% রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাঁদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে। চিকিৎসার জন্য প্লাজমাফেরেসিস (Plasmapheresis) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, যা আক্রান্তদের দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। মাত্র ৫% রোগীর ক্ষেত্রে জীবনহানির আশঙ্কা দেখা দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু করলে বিপদ এড়ানো সম্ভব। তাই কোনো ধরনের শারীরিক দুর্বলতা, অসাড়তা বা শ্বাসকষ্ট অনুভব করলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।