• নিখোঁজ রাজ্যের একাধিক জেলার পুণ্যার্থী, ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছেন কুম্ভ ফেরত যাত্রীরা
    এই সময় | ৩১ জানুয়ারি ২০২৫
  • বুধবার মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩০ জনের। মৌনী অমাবস্যায় পুণ্যস্নান সেরে আসার সময়ে দুর্ঘটনা ঘটে। রাজ্যের দুই বাসিন্দার মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে ইতিমধ্যেই। বিভিন্ন জেলা থেকে আসছে একাধিক পুণ্যার্থীর নিখোঁজ হওয়ার খবর। তড়িঘড়ি রাজ্যে ফেরত এসেছেন অনেক পুণ্যার্থী। ঘটনার দিনের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছেন সকলেই। 

    কোন কোন জেলায় নিখোঁজ (প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত)?

     পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির কোস্টাল থানা এলাকার ছোট বাঁধতলিয়ার বাসিন্দা প্রণব কুমার জানা (৭৫)। ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও খোঁজ নেই ওই ব্যক্তির। ইতিমধ্যে মহাকুম্ভের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন নিখোঁজ ব্যক্তির ছেলে আনন্দ জানা। তিনি কাঁথির সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সৌমেন্দু অধিকারী উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনকে মেল করে সমস্ত ঘটনা জানিয়েছেন বলে খবর। 

    মালদার  ইংরেজবাজার থানা এলাকার উত্তর কৃষ্ণপল্লীর বাসিন্দা অনিতা ঘোষ (৬০)। সোমবার আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে মহাকুম্ভের উদ্দেশে রওনা দেন। বুধবার স্নান করতে নামেন। তার পর থেকে কোনও খোঁজ মেলেনি বৃদ্ধার। পরিবারে খবর এসে পৌঁছতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। 

    প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলায় গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন শিলিগুড়ির সমরনগরের গৃহবধূ পুতুল রায়। বুধবার সকালে পরিবারের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল তাঁর। পরিবারের দাবি, ৭ নম্বর সেক্টর দিয়ে তাঁরা মেলায় প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পর ২২ নম্বর সেক্টরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এর পর থেকে পুতুলের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তাঁর ফোন বন্ধ। সহযাত্রীদের থেকেও আলাদা হয়ে গিয়েছেন তিনি। 

    মহাকুম্ভে স্নান করতে গিয়ে নিখোঁজ রানাঘাটের এক গৃহবধূও। গৃহবধূর নাম সুমিত্রা পাল (৫৪ )। তিনি নদিয়ার রানাঘাট পুরসভার তালপুকুর এলাকায় থাকেন। ২৭ জানুয়ারি স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে স্নান করতে গিয়েছিলেন। বুধবার থেকে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে পরিবারের দাবি। 

    কী অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ফেরত আসা যাত্রীরা?

    পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসিন্দা শুভেন্দু তেওয়ারি বলেন, ‘প্রচুর লোক সমাগম হয়েছিল। রাস্তাতেই বুঝেছিলাম প্রচুর ভিড় হবে স্নানের সময়। ভোরবেলা ঘুম ভাঙতে দেরি হওয়ায় ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ পরে ঘাটে গিয়েছিলাম। এটা হয়তো আমাদের ভাগ্যে ছিল। না হলে যে কী হতো?’

    হুগলির সিঙ্গুরের বাসিন্দা রাজু রুইদাস বলেন, ‘মাইকে একবার ঘোষণা  হলো হুড়োহুড়ি করবেন না। আস্তে আস্তে স্নান করে নেবেন।‌ কিছুক্ষণ পরে ব্যারিকেড ভেঙে পদপিষ্ট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটল। ঘটনার পর তো ওখানে  কাউকে যেতে দেয়নি। পরে স্নান সেরে আসবার সময় দেখলাম চারিদিকে কম্বল, ব্যাগ, জুতো, ঘট, জামা-প্যান্ট  পড়ে আছে। তবে অসম্ভব ভিড় ছিল এলাকায়। পা রাখার জায়গা ছিল না।’



    উল্লেখ্য, মঙ্গলবার গভীর রাতে ত্রিবেণী সঙ্গমে ৩০ জনের মৃত্যু এবং অন্তত ৬০ জনের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেই সময়ে কুম্ভমেলা প্রাঙ্গণে হাজির ছিলেন আট কোটিরও বেশি ভক্ত। প্রশাসনের আবেদনে সাড়া দিয়ে তাঁদের একটা বড় অংশ একসঙ্গে গঙ্গা, যমুনা এবং সরস্বতী নদীর সঙ্গমের দিকে এগিয়ে যান। হুড়োহুড়ির কারণেই বিপত্তি ঘটে। সরকারি গাফিলতির অভিযোগ তুলে ঘটনাটি নিয়ে ইতিমধ্যেই জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। 

  • Link to this news (এই সময়)