পূর্ব মেদিনীপুরে নাবালিকা বিয়ে ও পালানো রুখতে সচেতনতা শিবির পুলিসের
বর্তমান | ৩১ জানুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: সরস্বতী পুজো ও ভ্যালেন্টাইনস ডে-র আগে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে স্কুলে স্কুলে মেগা সচেতনতায় নামল পুলিস। সারা বছর এই জেলায় নাবালিকা পালানো ও বিয়ের খবর আসলেও ফেব্রুয়ারি মাসে সেটা একলাফে বেড়ে যায়। গত বছর ভ্যালেন্টাইস ডে-র দিনই প্রায় ২২ জন নাবালিকা ও বধূ প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছেড়েছিল। ময়না ও ভূপতিনগর থানায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পালানোর ঘটনা ঘটেছিল। তবে, অধিকাংশ নাবালিকাকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল পুলিস। তাই এবার আগেভাগে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ কর্মসূচির মাধ্যমে বয়ঃসন্ধিকালীন স্কুল পড়ুয়াদের সামনে হাজির হচ্ছে পুলিস। সঙ্গে থাকছে ‘মনের কথা বাক্স’। যে কথা পরিবার, শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বলা যাচ্ছে না, তা চিরকুটে লিখে অনায়াসে ওই বাক্সে ফেলা যাবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীর কাউন্সেলিং করানো হবে। ফেব্রুয়ারি মাস নিয়ে এবার বেশ টেনশনে রয়েছে পুলিস। কারণ, ৩ তারিখ সরস্বতী পুজো। ১৪ তারিখ ভ্যালেন্টাইন্স ডে। এক সপ্তাহ ধরে ভালোবাসা দিবস পালিত হবে। তাছাড়া, ২২ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর নাবালিকাদের মধ্যে পালানোর প্রবণতা বাড়ে। তাই ফেব্রুয়ারি মাসে নাবালিকা পালানোর ঘটনায় রাশ টানতে স্কুলে স্কুলে হাজির হচ্ছেন পুলিস অফিসাররা। সেখানে অষ্টম থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে সচেতনতা শিবির করা হচ্ছে। অল্প বয়সে বিয়ের খারাপ দিক তুলে ধরা হচ্ছে। তাছাড়া, এধরনের ঘটনায় কী আইনি পদক্ষেপ আছে সেসব নিয়েও সতর্ক করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার খেজুরি থানার দেখালি হাইস্কুল এবং হলদিয়ার ভবানীপুর থানার বাড়ঘাসীপুর হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে স্বয়ংসিদ্ধা কর্মসূচি পালন করে পুলিস। বুধবার ভূপতিনগর থানার বজরপুর রামকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের সামনে ‘মনের কথা’ বাক্স নিয়ে হাজির হন পুলিস অফিসাররা। এছাড়াও মারিশদা থানার সরপাই মডেল ইনস্টিটিউশন, জুনপুট কোস্টাল থানার অন্তর্গত দেশদত্তবাড় হাইস্কুল, পাঁশকুড়ার উষুধপুর সৌদামিনী বিদ্যামন্দির, হলদিয়ার ডোরো শোভারামপুর হাইস্কুলে ‘স্টপ চাইল্ড ম্যারেজ’ বার্তা নিয়ে কর্মশালা করে পুলিস। প্রতিটি কর্মসূচিতে মহিলা পুলিস অফিসার ও কর্মীদের রাখা হচ্ছে। নাবালিকা বিয়ে ও পালানোর ঘটনায় এরাজ্যের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। প্রতি মাসে গড়ে ৪০ থেকে ৬০ জন নাবালিকা পালানোর ঘটনা থানায় নথিভুক্ত হয়। চণ্ডীপুর, ভূপতিনগর, এগরা, ময়না প্রভৃতি থানা এলাকায় এধরনের ঘটনার হার অত্যন্ত বেশি। তবে, ভালোবাসার সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষ্যে ফেব্রুয়ারি মাসে পালানোর আশঙ্কা বেশি। সেকথা মাথায় রেখেই পুলিসের পক্ষ থেকে আগাম সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে। হলঘরের মধ্যে শিক্ষক, শিক্ষিকা এবং ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত হচ্ছেন। তাঁদের সামনেই এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। ১৮ বছরের আগে বিয়ের খারাপ দিক তুলে ধরছেন উর্দিধারীরা। স্কুল শিক্ষক শিক্ষিকারাও অভিভাবকের মতো ছাত্রছাত্রীদের এনিয়ে সতর্ক করছেন। এই সচেতনতা কতটা কাজে এল সময় এলে জানা যাবে।