এই সময়: কয়েক মিটার বেশ জোরে দৌড়ে এসে গড়িয়াহাট থেকে ছেড়ে দেওয়া বাসটায় উঠেছিলেন এক তরুণ। নিজেকে সামলে পকেট থেকে রুমাল বার করে কপালের ঘাম মুছলেন। এক সহযাত্রীর দিকে চোখ পড়তেই হেসে বলে উঠলেন, ‘ব্যস, শীতের ডিউটি শেষ। এ বার গরমের দিন শুরু।’ বাংলা ক্যালেন্ডার মতে তারিখটা ১৬ মাঘ। হিসেব মতো এত তাড়াতাড়ি ‘ডিউটি শেষ’ করে অফিস কাটার কথা নয় শীতের। কিন্তু ক্যালেন্ডারকে কাঁচকলা দেখিয়ে বহু দিন আগে থেকেই তো স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেছে ঋতুর দল।
এক দিন পরেই সরস্বতী পুজো। তবে বাসন্তী পঞ্চমীকে আবহাওয়া যে ছাড় দেবে, এমন সম্ভাবনা ক্ষীণ। রবি ও সোমবারও ঋতুর এমন স্বেচ্ছাচারিতা বজায় থাকবে বলেই জানাচ্ছেন আবহবিদরা। ওই দিন যাঁরা পাঞ্জাবি পরে রাস্তায় বেরোবেন, তাঁরা জহরকোট না পরলেই ভালো করবেন — এমনই পরামর্শ আবহবিদদের। শাড়ি পরিহিতাদের জন্যে তাঁরা জানাচ্ছেন, সঙ্গে শাল নিলে সেটা বোঝা হয়ে থাকবে। রোদ থেকে বাঁচতে সঙ্গে ছাতা এবং ঘাম মোছার জন্যে রুমাল রাখাই যুক্তিযুক্ত।
৩০ নভেম্বরের পর ৩০ জানুয়ারি — ৬১ দিনের মাথায় কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছে গেল ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। একদিন আগে, অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারির ভোররাতেও শহরের তাপমাত্রা ছিল ১৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাতারাতি প্রায় সাড়ে তিন ডিগ্রি বেড়ে শহর থেকে শীতের আমেজটুকুও কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা পাকা হয়ে গেল! আলিপুর হাওয়া অফিসের রেকর্ড বলছে, ৩০ নভেম্বর শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তার পর থেকে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার অনেক ওঠা–পড়া দেখেছে শহর। কিন্তু রাতের তাপমাত্রা ২১ ডিগ্রির ঘরে ওঠেনি গোটা ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির একেবারে শেষ পর্যায় পর্যন্ত। ৬১ দিন পর ৩০ জানুয়ারি যখন এমন ঘটল, খাতায়–কলমে তখনও শীতের দাপট বজায় থাকারই কথা। আলিপুর হাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ভোররাতে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা (২১ ডিগ্রি) ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
জানুয়ারির শেষ পর্যায়ে যে এমনটা ঘটতে চলেছে, কয়েক দিন আগেই অবশ্য তার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন আবহবিদরা। জানিয়েছিলেন, উত্তর–পশ্চিম ভারতে তৈরি হওয়া জোড়া ঝঞ্ঝায় ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়ার প্রবেশপথ অবরুদ্ধ হবে। তার প্রভাবেই ‘হঠাৎ করে’ শীতের আমেজ লোপ পেতে চলেছে বাংলা থেকে। শুধু কলকাতা নয়, প্রায় গোটা দক্ষিণবঙ্গেরই এক অবস্থা। একমাত্র পুরুলিয়াই (১০.১) শীতের আমেজ ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে।
বাকি প্রায় সব জেলাতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির উপরে চলে গিয়েছে। দক্ষিণবঙ্গ থেকে আপাতত শীতের আমেজ পুরোপুরি লোপ পেলেও মাঝে মাঝে তার ‘ঝটিকা সফর’–এর সম্ভাবনা অবশ্য একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। জানাচ্ছেন, হঠাৎ করেই কয়েক ঘণ্টার ঠান্ডা হাওয়ায় শীত নিজের অস্তিত্ব জানান দেবে। তবে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।