• হাতির তাণ্ডবে ফসলের ক্ষতিপূরণ দিতে মোবাইল অ্যাপ
    এই সময় | ৩১ জানুয়ারি ২০২৫
  • যতদিন যাচ্ছে উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে হাতির হামলা বেড়েই চলেছে। তাতে যে শুধু মানুষের প্রাণহানি ঘটছে তাই নয়, নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার একর জমির ফসল। হাতির পাল ক্ষেতের ফসল নষ্ট করলে সরকার থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু সেই টাকা হাতে পেতে বছর গড়িয়ে যায়। তা নিয়ে অনেক অনিয়মের অভিযোগও শুনতে পাওয়া যায়।

    ফসল নষ্ট না হলেও অনেকে জাল নথি বানিয়ে সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা হাতিয়ে নেন। এই সমস্যা মেটাতে নতুন মোবাইল অ্যাপ তৈরি করছে রাজ্য সরকার। যার মাধ্যমে খুব সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আর্থিক ক্ষতিপূরণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাতে পারবেন। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেই সেই তথ্যের সত্যতাও যাচাই করতে পারবেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। ফলে খুব দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হবে।

    নবান্নের কর্তারা জানাচ্ছেন, হাতির হামলায় জমির ফসল নষ্ট হলে কৃষকদের ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে অনেক সময় লাগছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরে বারবার অভিযোগ আসছিল। উত্তরবঙ্গ এবং জঙ্গলমহলে মুখ্যমন্ত্রী যখনই প্রশাসনিক বৈঠক করতে গিয়েছেন, এই ইস্যুতে সরব হয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এসবের প্রেক্ষিতে একটা স্থায়ী সমাধানসূত্র খুঁজে বের করতে রাজ্যের তথ্য–প্রযুক্তি দপ্তরকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পরামর্শ মেনে বিশেষ ধরনের মোবাইল অ্যাপ বানানোর কাজ শুরু করেছে রাজ্যের তথ্য–প্রযুক্তি দপ্তরের অধীনস্থ সংস্থা ওয়েবেল টেকনোলজি লিমিটেড। তাতে একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের হাতে খুব দ্রুত আর্থিক ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়া সম্ভব হবে, তেমনি অনিয়মও আটকানো যাবে।

    কী ভাবে কাজ করবে এই অ্যাপ?

    তথ্য–প্রযুক্তি আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, হাতি সহ অন্য যে কোনও বন্য জন্তুর আক্রমণে যদি ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয় তাহলে এই অ্যানড্রয়েড অ্যাপের সাহায্যে ক্ষতিপূরণের জন্য সরাসরি আবেদন করা যাবে। এটা অনেক বেশি ইউজার ফ্রেন্ডলি হবে। জালিয়াতি রুখতে নাম রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে সরকারি পরিচয়পত্র এবং আধার নম্বর আগে থেকে নথিভুক্ত করাতে হবে। হাতির হামলায় জমির যে অংশের ফসল নষ্ট হবে, মোবাইল ক্যামেরায় তার ছবি তুলে অ্যাপে আপলোড করে দিতে হবে। সঠিক অবস্থান বুঝতে জিও লোকেশন ব্যবহার করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

    বন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং বীরভূম জেলায় হাতির উপদ্রবে ফসল নষ্টের ঘটনা বেশি ঘটে। একই ভাবে উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলায় হাতির হানায় ফি–বছর বিপুল পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়। বনদপ্তরের এক আধিকারিকের কথায়, জমিতে যখন ফসল ফলতে শুরু করে সেই সময় দলমা পাহাড় থেকে হাতির দল খাবারের সন্ধানে জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় হানা দেয়। এর ফলে ধানের ক্ষেত, আম, কলা, কাজু বাগান এবং সব্জি ক্ষেতের ক্ষতি হয়। ফসল নষ্টের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিবেলে ক্ষতিপূরণ মেলে মাত্র ৬০ টাকা। বিঘা প্রতি মেলে ২০০–৩০০ টাকা। কিন্তু সেই টাকা পেতেও কখনও দুই থেকে তিন বছরও লেগে যায়।

    পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির বাসিন্দা শ্যামলসুন্দর মাহাত বলেন, ‘আমি পাঁচশোটা কাজুর চারা লাগিয়েছিলাম। তার মধ্যে চারশোটা গাছ হাতি নষ্ট করে দিয়েছে। তিন বছর হয়ে গেল এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা হাতে পাইনি।’

    আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, ‘ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ পেতে অনেক সময় লাগে। আবেদনের প্রক্রিয়াটাও বেশ জটিল। মোবাইল অ্যাপ চালু হলে যদি এই সমস্যা মেটে তাহলে উত্তরবঙ্গের মানুষ উপকৃত হবে।’

  • Link to this news (এই সময়)