এই সময়: আর কিছুটা পথ অতিক্রম করতে পারলেই সঙ্গম ঘাট। কিন্তু ওই সামান্য দূরের ঘাটটিও দেখা যাচ্ছিল না। আড়াল হয়ে গিয়েছিল কালো মাথার আড়ালে। সেই ভিড় ঠেলে ঘাটে যাওয়াই দুঃসাধ্য। তবুও শাহিস্নানের চেষ্টা করেছিলেন মালদার আইনজীবী সুদীপ্ত গঙ্গোপাধ্যায় এবং সঙ্গে থাকা আরও ১২ জন।
তাঁদের কেউ আইনজীবী, কেউ আইনের পড়ুয়া। পদপিষ্ট হয়ে সকলে হয়তো মারাই যেতেন, কিন্তু কোনওক্রমে একটি প্রিজ়ন ভ্যানের ছাদে উঠে প্রাণ বাঁচান ওরা। এদের মতো অভিজ্ঞতা হয়েছে আরও কয়েক জনের। পূণ্য অর্জনের আশায় পূর্ণ কুম্ভে গিয়ে যে এমন অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে হবে, তা ভাবতেও পারেননি কেউ।
বৃহস্পতিবারেও আতঙ্ক কাটেনি সুদীপ্তর। ফোনে তিনি বলেন, ‘সঙ্গমঘাটের কাছে একটা মাত্র গেট ছিল। তার এ পারে প্রায় ৪০-৫০ লক্ষ লোক অপেক্ষায়। ও পারে কতজন ঘাটে জানি না। ভিড় সামলানোর জন্য কোনও পুলিশ ছিল না সেখানে। আচমকা শুরু হয়ে গেল হুড়োহুড়ি। কী কারণে কিছুই বুঝতে পারলাম না। শুধু দেখলাম আমাদের চোখের সামনে কয়েকজন পড়ে গেল। তার মধ্যে আমাদেরও দু’-এক জন ছিল। কোনওক্রমে ওদের টেনে তুললাম। কাছেই একটা প্রিজ়ন ভ্যান ছিল। প্রাণপণে সেটার ছাদে চড়ে বসলাম। চোখের সামনে কত মানুষকে পদপিষ্ট হতে দেখলাম। সারা রাত ওই ভ্যানের উপরেই কেটেছে। ভোরের আলো ফোটার পরে বোঝা গেল গাড়ির উপরে আমরা প্রায় ৭৫-৮০ জন রয়েছি।’
মালদার ইংরেজবাজারের সদরঘাট এলাকার ব্যবসায়ী শুভ্রদীপ দাস, পুরাতন মালদার আরও চার ব্যবসায়ীর সঙ্গে কুম্ভে গিয়েছিলেন শাহিস্নানের জন্য। মঙ্গলবার রাত দেড়টার সময়ে তাঁরা ছিলেন ১৬ নম্বর সেক্টরের রোহিনীপুর ঘাট সংলগ্ন এলাকায়। শুভ্রদীপ বলেন, ‘ভিড়ের চাপে এগোতে পারছিলাম না। আচমকা শুরু হয়ে যায় দৌড়ঝাঁপ। আগুপিছু না ভেবে ছুটে একটা ফাঁকা জায়গায় চলে যাই আমরা। চোখের সামনে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেল। খানিকক্ষণ পরে দেখলাম স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পুণ্যার্থীদের।’
দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ব্লকের শিয়ালকুড়ির যুবক অরবিন্দ মজুমদার কিন্তু পুরোপুরি রক্ষা পাননি। হুড়োহুড়ির মধ্যে পড়ে পায়ে চোট পান তিনি। আলাদা হয়ে যান সঙ্গিদের থেকে। তিন ঘণ্টা পরে বন্ধুরা তাঁকে খুঁজে পান।
স্নানঘাটের দিকে যাওয়ার পথে হুড়োহুড়ি শুরু হতেই আলিপুরদুয়ারের হাসিমারার সমাজকর্মী শুক্লা দেবনাথের সামনে কোলের শিশুকে নিয়ে ছিটকে পড়েছিলেন এক মহিলা। তিনি বলেন, ‘আমি শুয়ে পড়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। তার পরে আর কিছু মনে নেই। বালির উপর শোয়া অবস্থায় জ্ঞান ফিরতে দেখি আমার মাথায় জল ঢালছেন একজন সাধু। পাশেই নিথর অবস্থায় পড়ে রয়েছেন মা ও কোলের শিশুটি। ওই দৃশ্য দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।’