• নতুন কোম্পানির স্যালাইনেও ছত্রাক! উৎপাদন বন্ধে মহাফাঁপরে হাসপাতাল
    এই সময় | ৩১ জানুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: অভিযুক্ত পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের বদলে ফার্মা ইমপেক্স নামে একটি সংস্থাকে সরকারি হাসপাতালে রিঙ্গার্স ল্যাকটেট (আরএল)-সহ নানা রকম স্যালাইন সরবরাহের বরাত দেওয়া হয়েছিল। ‘ব্ল্যাকলিস্টেড’ পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের দামেই ফার্মা ইমপেক্স সব ধরনের ইন্ট্রাভেনাস (আইভি) ফ্লুইড সরবরাহে রাজি হয়েছিল।

    কিন্তু নতুন ওই সংস্থার তৈরি একাধিক ব্যাচের আইভি ফ্লুইডেও ধরা পড়েছে ফাঙ্গাস। ড্রাগ কন্ট্রোল ওই সংস্থার প্লান্ট পরিদর্শন করে অসন্তুষ্ট হয়। এ বার ফার্মা ইমপেক্স নামে বারুইপুরের ওই সংস্থাকেও উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিল রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল। সরকারি এই নির্দেশে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের কর্তারা। তাঁদের চিন্তা— এ বার আইভি ফ্লুইড জোগাড় করবেন কী ভাবে!

    প্রথমে কর্নাটকে আর তার পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি–মৃত্যুর ঘটনায় আগেই কাঠগড়ায় উঠেছিল উত্তরবঙ্গের পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি রিঙ্গার্স ল্যাকটেট ফ্লুইড। মেদিনীপুরের ঘটনার আগেই ওই সংস্থাকে উৎপাদন বন্ধ করতে বলেছিল রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল।

    কেননা উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় তাদের প্লান্ট ভিজ়িট করে বোঝা গিয়েছিল, ফ্লুইডের উৎপাদন চলাকালীন জীবাণুমুক্তকরণের প্রক্রিয়ায় গলদ রয়েছে। অপরিস্রুত ফ্লুইড তৈরি হচ্ছে ওই প্লান্টে। সে জন্যে গত ১০ ডিসেম্বর ওই প্লান্টের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয় নোটিস জারি করে। পরে মেদিনীপুরের ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় ওই সংস্থার তৈরি সব রকম ফ্লুইড ব্যবহার বন্ধ করতে স্বাস্থ্য দপ্তর নির্দেশ দেয় সরকারি হাসপাতালগুলিকে।

    স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি নির্দেশে ১৪ জানুয়ারি বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালসের বদলে ফার্মা ইমপেক্সের তৈরি ফ্লুইড কেনা যাবে সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর (সিএমএস)–এর স্টোর ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম (এসএমআইএস) পোর্টালের মারফৎ। কিন্তু তাতেও গোল বাধে কয়েক দিনের মধ্যেই। সরকারি নজরদারি ব্যবস্থাতেই ধরা পড়ে, ছত্রাক বা ফাঙ্গাস রয়েছে ফার্মা ইমপেক্সের তৈরি ডেক্সট্রোজ ইঞ্জেকশনে।

    গত ১৮ জানুয়ারি রাজ্যের সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সিএমএস-এর তরফে একটি মেসেজে জানানো হয়, ওই কোম্পানির নির্দিষ্ট একটি ব্যাচের (২৩১৩এ০০০৮) ডেক্সট্রোজ ইঞ্জেকশন যেন আর ব্যবহার করা না হয়। এর পরেই ড্রাগ কন্ট্রোল ফার্মা ইমপেক্সের বারুইপুরের প্লান্ট ভিজ়িট করে ২১ ও ২৩ জানুয়ারি। সেই ভিজ়িটে সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগ স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও)–এর আধিকারিকরাও।

    বুধবার রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল নির্দেশ জারি করে, পরিদর্শনে সন্তোষজনক উৎপাদন পদ্ধতি চোখে পড়েনি। বড়সড় ২৬ রকমের এবং মারাত্মক ৫ রকমের খামতি ধরা পড়েছে ওই যৌথ পরিদর্শনে। তাই অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে উৎপাদন। সব ক’টি খামতি শুধরে না নেওয়া পর্যন্ত আর কোনও ওষুধই উৎপাদন করতে পারবে না ফার্মা ইমপেক্স। পাশাপাশি, কেন তাদের ওষুধ তৈরির লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করা হবে না, সেই মর্মে শো–কজ়ও করা হয়েছে ওই সংস্থাকে।

    যদিও ফার্মা ইমপেক্সের উৎপাদিত যে সব ওষুধ ইতিমধ্যেই বাজারে কিংবা হাসপাতালের স্টোরে মজুত রয়েছে, সেগুলির ব্যবহার বন্ধ করা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ করার এই আদেশনামার ফলে বিপাকে পড়েছে সরকারি হাসপাতালগুলি। একটি মহকুমা হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘এখন ওই দামে আর কে ওষুধ বিক্রি করবে সরকারকে? আমাদের বিকল্প কোনও সংস্থার নাম না জানালে খোলা বাজার থেকে ফ্লুইড–সহ নানা ওষুধ কিনতে বিস্তর খরচ বাড়বে।’

  • Link to this news (এই সময়)