• সময়ের সঙ্গে কেমন বদলাবে কাগজ!
    এই সময় | ৩১ জানুয়ারি ২০২৫
  • সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলাই যুগের নিয়ম। সিনেমা, সাহিত্য, রাজনীতি—এ সব কিছুই গত কয়েক দশকে আমূল পাল্টে গিয়েছে। বছর কুড়ি আগে রাজনীতিকরা যে ভাষায় কথা বলতেন, সে ভাষা তাঁরা হয়তো এখন ভুলেই গিয়েছেন। বদলে গিয়েছে সিনেমা, সাহিত্যের বিষয়বস্তুও। খবরের কাগজ–ই বা কেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বদলে নেবে না? কেন খবরের কাগজ হয়ে উঠবে না এই সময়ের? আশি বা নব্বইয়ের দশকের খবরের কাগজের সঙ্গে আজকের খবরের কাগজের দর্শনের মিল খোঁজা অনর্থক। বদল হয়েছে। বদল আরও হবে। পরিবর্তন যে অনিবার্য।

    আজ থেকে দশ বছর পর প্রিন্ট মিডিয়ার চরিত্র ঠিক কেমন হবে, সেটা ২০২৫–এ দাঁড়িয়ে কল্পনা করাও হয়তো সম্ভব নয়। কিন্তু একটা ধারণা হয়তো তৈরি করা যেতেই পারে। ৪৮ তম কলকাতা কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা প্রাঙ্গণে বৃহস্পতিবার ‘এই সময়’–এর প্যাভিলিয়নে ‘এই সময় প্রাইম’ আলোচনাসভায় তাই দর্শক–শ্রোতাদের ‘টাইম মেশিনে’ চাপিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ঢুঁ মারা গেল ২০৩৫–এ!

    খুঁজে দেখা হলো ঠিক কতটা বদল এসেছে ২০৩৫–এর প্রিন্ট মিডিয়ার চরিত্রে। ‘এই সময়’–এর সঙ্গে ‘টাইম মেশিন’–এ সফরসঙ্গী হয়েছিলেন দুই বাঙালি গবেষক রিমঝিম সিনহা এবং শুভজিৎ সরকার। গবেষক ছাড়াও রিমঝিমের আরও একটি পরিচয় আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি–ই ‘মেয়েরা রাত দখল করো’–র ডাক দিয়েছিলেন। আর গবেষণার পাশাপাশি শুভজিৎ বাম ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী।

    রিমঝিম স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন, ২০৩৫–এ বাংলার গ্রাম–গঞ্জের মানুষের কাছে খবরের অন্যতম সোর্স হিসেবে প্রিন্ট মিডিয়া বহাল তবিয়তে আছে। তবে তাঁর আশঙ্কা, আগামীতে খবরের কাগজের উপর আগ্রাসন আরও নেমে আসবে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশে গণ–চিন্তার বড় প্রয়োজন। খবরের কাগজ মানুষকে চিন্তা করতে শেখায়। ভাবতে শেখায়। তাই খবরের কাগজকে রক্তাক্ত করার চেষ্টা হবে।’ কিন্তু সেই চেষ্টা বাংলার শুভশক্তি রুখে দেবে বলেই রিমঝিমের বিশ্বাস। একই মত শুভজিতেরও।

    তাঁর সাফ কথা, ‘রাষ্ট্র সোশ্যাল মিডিয়াকে যতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, প্রিন্ট মিডিয়াকে ততটা পারে না।’ শুভজিৎ মনে করছেন, দশ বছর পর কোনও ভাবে খবরের কাগজ বিপন্ন হলে সাধারণ মানুষের অস্তিত্বও বিপন্ন হবে। শুভজিতের বক্তব্য, ‘সোশ্যাল মিডিয়া শক্তিশালী হয়েছে। সেটা খবরের কাগজের জন্য একটা চ্যালেঞ্জও। কিন্তু গবেষণার ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু ২০৩৫–এও কোনও ফেসবুক পোস্টকে প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচনা করব না। তার জন্য নির্ভর করতে হবে খবরের কাগজে প্রকাশিত কোনও আর্টিকেলের উপরেই।’

    কেমন হতে পারে দশ বছর পরের একটা খবরের কাগজ? উদাহরণ দিয়ে শুভজিৎ বলেন, ‘এমন‍ও হতে পারে, খবরের কাগজের পাতায় কিউআর কোড থাকবে। সেখানে ফোন নিয়ে গেলে পুরো খবরটা ফোনেই পড়ে ফেলা যাবে।’ যদিও তার জন্য দশ বছর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। সেই পরীক্ষা–নিরীক্ষা এখনই প্রিন্ট মিডিয়ায় শুরু হয়ে গিয়েছে।

    প্রিন্ট মিডিয়ার বিকল্প হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়াকে তুলে ধরার একটা চেষ্টা অবশ্য জারি আছে। কিন্তু তার আদৌ কি কোনও বাস্তব ভিত্তি আছে? রিমঝিম এবং শুভজিত দু'জনেই মানছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠিক-ভুল যাচাই করার কোনও উপায় নেই। সেই নিরিখে প্রিন্ট মিডিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা এখনও অনেক বেশি।

    তবে কাগজ তৈরির জন্য গাছ কাটার বিষয়টি নিয়ে কিছুটা উদ্বিগ্ন রিমঝিম। কারণ, গাছের ছাল ছাড়া যে কাগজ–ই তৈরি হবে না! আর কাগজ–ই প্রিন্ট মিডিয়ার অন্যতম উপকরণ।

    তা হলে? ‘টাইম মেশিন’–এ চেপে ২০৩৫–এ ঢুঁ মেরে রিমঝিমরা দেখে এসেছেন, খবরের কাগজ ‘রিসাইকেল’ করার পদ্ধতি আবিষ্কার হয়ে গিয়েছে। ফলে কাগজ ছাপতে আর গাছ কাটতে হচ্ছে না।

  • Link to this news (এই সময়)