এই সময়, কোচবিহার: সেচ দপ্তরের নদী–বাঁধ দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে কোচবিহারে। সব মিলিয়ে প্রায় ৬৫০টি বাড়ি, দোকান উচ্ছেদ করা হবে। ইতিমধ্যে বাসিন্দাদের নোটিস পাঠানোর কাজ শুরু করেছে সেচ দপ্তর। ওই নোটিসে ১৫ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কোচবিহার, মাথাভাঙা এবং তুফানগঞ্জ শহর লাগোয়া নদী–বাঁধ দখলমুক্ত করতে শুধু নোটিস নয়, মাইকেও প্রচার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, কোচবিহার শহরে তোর্ষা নদীর বাঁধের দু'পাশে, মাথাভাঙা শহর লাগোয়া মানসাই নদীর বাঁধের উপরে এবং তুফানগঞ্জ শহরের রায়ডাক নদীর বাঁধের উপরে থাকা দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে। প্রক্রিয়া শুরুর আগে কয়েক মাস ধরে নাম–ঠিকানা সংগ্রহ করে স্থানীয় থানায় অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে সেচ দপ্তর। কোচবিহার জেলা সেচ দপ্তরের এগজি়কিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বদিরুদ্দিন শেখ বলেন, ‘তিন শহরকে বাঁচাতে বাঁধের উপরে থাকা বাড়িঘর, দোকানপাট উচ্ছেদ করা হবে। দীর্ঘদিন ধরে দখল হওয়ায় বাঁধের যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে।’
তবে এই অভিযানে সেচ দপ্তরকে বেশ বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে। কোচবিহারের বিজেপি বিধায়ক সুকুমার রায়ের মন্তব্য, ‘এতগুলো পরিবার কোথায় যাবেন? তাঁদের পুনর্বাসনের করে উচ্ছেদ করুক প্রশাসন।’ কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘প্রশাসন এবং সেচ দপ্তর দেখছে। স্পর্শকাতর বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।’
কোচবিহার শহরের খাগড়াবাড়ি থেকে হরিণ চওড়া পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ নদী–বাঁধ রয়েছে। সব মিলিয়ে ৫২৯টি বাড়ি ও দোকান রয়েছে নদীর দু’ধারে। সবই জবরদখল। দীর্ঘদিন ধরে বাড়িঘর ও দোকানপাট নির্মাণের ফলে বাঁধটি রুগ্ন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। বাঁধ রক্ষার দাবিতে পরিবেশপ্রেমীরা ডেপুটেশনও দিয়েছেন সেচ দপ্তরে। তবে এক দিনে এ সব হয়নি। গত কুড়ি বছরে একটু একটু করে বাঁধের জমি দখল হলেও সেচ দপ্তরের কর্তারা কেন পদক্ষেপ করেননি, তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিজস্ব জমির বাইরে অনেকে আবার বাড়ির অংশ এগিয়ে নিয়েছেন সেচ দপ্তরের জমিতে। অভিযোগ, ভূমি রাজস্ব দপ্তর থেকে সেই জমির কাগজপত্রও তৈরি করে নিয়েছেন অনেকে।
ফলে নোটিস দিয়ে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু হলে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শুধু কোচবিহার নয়, মাথাভাঙা শহরেও মানসাই নদীর ধারে থাকা বাঁধের উপরে অবৈধ বাড়িঘর, দোকানপাট রয়েছে। একই পরিস্থিতি তুফানগঞ্জ শহরের। এ খানেও রায়ডাক নদী থেকে শহরকে বাঁচাতে যে বাঁধ করা হয়েছিল তা-ও জবরদখল হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। প্রশাসন বিকল্প ব্যবস্থা না–করলে তাঁরা উঠবেন না বলে ইতিমধ্যে হুমকি দিয়েছেন দখলদাররা।