• দেওয়া হয়নি ডেথ সার্টিফিকেট, যোগী প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জামুড়িয়ার
    বর্তমান | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, জামুড়িয়া: কুম্ভমেলায় চূড়ান্ত গাফিলতিই প্রাণ কাড়ল জামুড়িয়ার টোটোচালক বিনোদ রুইদাসের। যোগী প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন এলাকার বাসিন্দারা। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলেও ময়নাতদন্ত করানো হয়নি। মৃতদেহের সঙ্গে দেওয়া হয়নি ডেথ সার্টিফিকেটও। মৃতের মানিব্যাগে আধার কার্ড থাকলেও বেওয়ারিশ লাশের স্তূপে বছর ৪২-এর বিনোদবাবুর দেহ ফেলে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে তাঁর শ্যালক বিষ্ণু রুইদাস জামাইবাবুর দেহ খুঁজে আনেন। তাঁর দাবি, সেখানে অন্তত ৫০-৬০টি দেহ ফেলে রাখা হয়েছিল। বেশিরভাগই মহিলা ও শিশুর দেহ। ছবি তোলার জন্য মোবাইল বের করতেই প্রশাসনের লোকজন হুঁশিয়ারি দেয়। পদপিষ্ট হয়ে কত মানুষ মারা গিয়েছেন তার কোনও হিসেব নেই। তথ্য গোপন করছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। দেড় দিন ধরে খোঁজার পর জামাইবাবুর হদিশ পা‌ই। সেখানকার প্রশাসনের কোনও সাহায্য পাইনি। মৃত্যুর তথ্য ঢাকতে নোংরামি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের।


    শুক্রবার বিনোদবাবুর দেহ জামুড়িয়ায় আনা হয়। মৃতদেহের সঙ্গে এসেছিল প্রয়াগরাজ পুলিস লাইনের হেড কনস্টেবল বাদরুদ্দিন খান। তিনি বলেন, আমাকে মৃতদেহ বাড়িতে পৌঁছে চলে যেতে বলা হয়েছে। ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃতের কোনও কাগজ দেওয়া হয়নি। তৃণমূল কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছে, যোগী সরকার পুলিস দিয়ে লাশ পাচার করছে বিভিন্ন রা঩জ্যে। যাতে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে দেখানো যায়। 


    অভিযোগের কিছুটা হলেও সত্যতা মেলে যোগী প্রশাসনের পাঠানো অ্যাম্বুলেন্স চালক মিরাজ খান কথায়। তিনি বলেন, অনেক লোক মারা গিয়েছে। এক-একটা অ্যাম্বুলেন্স আসছে একজন পুলিস ও দেহ তুলে নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার সামনেই ২৫টা অ্যাম্বুলেন্স এভাবে বেরিয়েছে। মৃতদেহের সঙ্গে কোনও কাগজপত্র আমাদের দেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য, গত সোমবার শ্যালক বিষ্ণু ও তার বন্ধুর সঙ্গে বিনোদবাবু মহাকুম্ভে মৌনী অমাবস্যায় স্নান করার জন্য রওনা দেন। মঙ্গলবার রাতে প্রয়াগরাজে পৌঁছন। বুধবার কাকভোরে দুর্ঘটনা ঘটে। তিনজন বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। বুধবার ভোর থেকে সারাদিন হন্যে হয়ে ঘুরেও জামাইবাবুর হদিশ পাননি বিষ্ণু। তিনি অভিযোগ করেন, কোনও প্রশাসনিক সাহায্য পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার সকালে জামাইবাবুর ফোনে কল করলে এক ব্যক্তি ফোন ধরেন। উনি জানান, পদপিষ্ট হওয়ার জায়গায় ফোনটি পেয়েছেন। হাসপাতালে যোগাযোগ করতে বলা হয়। এরপর আমি একটি টোটো করে হাসপাতালে পৌঁছই। সেখানেই জামাইবাবুর দেহ দেখতে পাই। 


    ঘটনার খবর জানতে পেরে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। বিনোদবাবুর ১৪ ও  ১২ বছরের দুই মেয়ে এবং পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া এক ছেলেও রয়েছে। টোটো চালিয়ে বিনোদবাবু তিনজনকে পড়াশোনা শেখাচ্ছিলেন। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তিন খুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের মুখে।


    মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ মৃতদের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তা থেকে বাংলার টোটোচালকের পরিবারকে বঞ্চিত করতেই এই কৌশল বলে অভিযোগ করেন এলাকার জনপ্রতিনিধি তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণি কর্মাধ্যক্ষ পুতুল বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে, মৃতদেহ দেওয়ার পাশাপাশি আত্মীয়ের হাতে ১৫হাজার টাকা থাকা একটি খাম তুলে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের কাছে পুণ্যার্থীদের জীবনের দাম ১৫হাজার টাকা? প্রশ্ন তুলেছেন মৃতের পরিবারের সদস্যরা।


    এদিন জামুড়িয়া থানার কেন্দা ফাঁড়িতে দেহ আসতেই হাজির হন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক হরেরাম সিং, তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। নরেন্দ্রনাথবাবু বলেন, অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। মৃত্যু ঢাকতে নোংরা রাজনীতি করা হচ্ছে।


    (বিনোদ রুইদাসের শোকার্ত পরিবার।-নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)