‘প্রিম্যাচিওর’ শিশুদের অন্ধত্ব রোধে একসঙ্গে কাজ করবে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর ও হলদিয়ার রামকৃষ্ণ সারদা মিশন আশ্রম
বর্তমান | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শ্যামল সেন, হলদিয়া: নির্দিষ্ট সময়ের আগে প্রসব হওয়া অপরিণত শিশু বা প্রিম্যাচিওর বেবির অন্ধত্ব ঠেকাতে জেলা স্বাস্থ্যদপ্তরের উদ্যোগে নতুন প্রকল্প শুরু হচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরে। প্রিম্যাচিওর বেবিদের মধ্যে চোখের দৃষ্টিশক্তির মূল অংশ রেটিনায় রক্তনালীর অস্বাভাবিক বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। এর ফলে অনেক সময় রেটিনায় রক্তক্ষরণ ঘটে। রেটিনার আলোক সংবেদী বা লাইট সেনসিটিভ টিস্যু নষ্ট হয়ে গিয়ে শিশুটি দৃষ্টি হারাতে পারে। এধরনের অন্ধত্ব ঠেকাতে সনাক্তকরণ এবং চিকিৎসার কাজ শুরু হচ্ছে জেলার গ্রামে গ্রামে। সদ্যোজাত শিশুদের চোখের চিকিৎসায় নতুন প্রকল্পের নাম ‘রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিওরিটি’(আরওপি) সনাক্তকরণ ও চিকিৎসা পরিষেবা। রাজ্যে প্রথম মডেল প্রকল্প হিসেবে পূর্ব মেদিনীপুরের পঞ্চায়েত ও পুর এলাকায় আরওপি সনাক্তকরণ শিবির শুরু হচ্ছে। শুক্রবার গেঁওখালিতে হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ‘ত্রিবেণী সঙ্গম’ সভাঘরে প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। প্রকল্পের সূচনা করেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিভাস রায় ও হলদিয়ার রামকৃষ্ণ সারদা মিশন আশ্রমের সাধারণ সম্পাদক স্বামী বিবেকাত্মানন্দজি মহারাজ।
স্বাস্থ্যদপ্তর জানিয়েছে, জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর ও হলদিয়ার রামকৃষ্ণ সারদা মিশন আশ্রম যৌথভাবে প্রকল্প রূপায়ণ করবে। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর সম্প্রতি এই প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। রাজ্যে এই প্রথম গ্রাম ও মফস্সলে এধরনের সমীক্ষার কাজ শুরু হচ্ছে। এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তিনজন ডেপুটি সিএমওএইচ নারায়ণ মিদ্যা, ষষ্ঠীভূষণ কুণ্ডু ও সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা পরিষদ সদস্য পূর্ণেন্দু জানা সহ বিশিষ্টরা। প্রকল্প শুরুর আগে এদিন আরওপি নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের কর্মশালা হয়। কর্মশালায় সিএমওএইচ, বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসক রতীশচন্দ্র পাল বক্তব্য রাখেন। তাঁরা বলেন, বর্তমানে প্রিম্যাচিওর ডেলিভারি অর্থাৎ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শিশুর জন্মের প্রবণতা বাড়ছে। এর ফলে রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচিওরিটি(আরওপি) হওয়ার সম্ভাবনাও প্রবল। প্রি-ম্যাচিওর বেবি অর্থাৎ নবজাত শিশুর জন্মের পর ওজন যদি ২কেজির কম হয়, অথবা শিশু যদি ৩৪ সপ্তাহের আগেই ভূমিষ্ঠ হয়ে থাকে, কিংবা জন্মের পরেই যদি শিশুকে নিওনেটাল বা পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের অক্সিজেন ঘরে রাখা হয়ে থাকে, তাহলে তার চোখের পরীক্ষা দরকার। সিএমওএইচ বলেন, মেডিক্যাল কলেজে এধরনের পরীক্ষা হয়। কিন্তু জেলায় সরকারি পরিকাঠামোতে কোথাও আরওপি পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি বা বিশেষজ্ঞ নেই। সেজন্য রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর সরকারি বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে পূর্ব মেদিনীপুরে একাজ শুরু করছে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরকে একাজে সহায়তা করবে হলদিয়ার রামকৃষ্ণ সারদা মিশনের চোখের হাসপাতাল এবং বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর মিশনের হাসপাতালকে এই অনুমতি দিয়েছে এবং এজন্য মউ চুক্তি হচ্ছে। স্বামী বিবেকাত্মানন্দজি মহারাজ বলেন, আরওপি সনাক্তকরণ ও চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে আশাকর্মী, নার্স, প্রসূতি ও শিশু বিশেষজ্ঞদের সর্বপ্রথম সচেতন হতে হবে। এই সচেতনতা এবং সমীক্ষার কাজ করবে মিশন।-নিজস্ব চিত্র