জিপিএস ট্র্যাক করেই ছুরি-হামলা, মৃত্যু বাবার প্রেমিকার
বর্তমান | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাবার ‘পরকীয়া’য় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল ছেলে। তাই বাবাকে ও তাঁর প্রেমিকাকে ‘শিক্ষা’ দিতে রীতিমতো আঁটঘাট বেঁধে নেমেছিল দশম শ্রেণির ছাত্র ওই নাবালক। জিপিএস ট্র্যাকার কিনে লাগিয়ে দিয়েছিল বাবার গাড়িতে! উদ্দেশ্য একটাই—প্রতি মুহূর্তে নিজের মোবাইল থেকে বাবার গাড়ির গতিবিধির উপর নজর রাখা। সেই জিপিএসের সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টা নাগাদ ই এম বাইপাসের ধারে জমজমাট রেস্তরাঁর সামনে বাবা ও তাঁর প্রেমিকাকে একসঙ্গে ‘ধরে ফেলে’ ছেলে, তার মা এবং এক তুতোদাদা। অন্য মহিলার সঙ্গে হাতেনাতে ধরা পড়ায় নাবালকের মা যখন তার বাবার সঙ্গে জোর বচসায় জড়িয়েছেন, তখন বাবার প্রেমিকা রাফিয়া শাকিলকে প্রকাশ্যে ছুরি দিয়ে কোপানো হয়। খুনে জড়িত অভিযোগে প্রগতি ময়দান থানার পুলিস নাবালককে আটক করেছে। সেই সঙ্গে পুলিস গ্রেপ্তার করেছে নাবালকের সম্পর্কিত দাদা ওয়াসিম আক্রমকে। কলকাতা পুলিসের ইস্ট ডিভিশনের ডিসি অরীশ বিলাল এই খবর জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ থেকে পুলিস জেনেছে, এদিন রাতে ভিড়ে ঠাসা রেস্তরাঁর সামনে একটি ‘থর’ গাড়ি এসে থামার কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে আসে একটি এসইউভি। ‘থর’-এর দরজা খুলে নামেন রাফিয়া শাকিল। তাঁর পিছনে ছিলেন পুরুষসঙ্গী তথা নাবালকের বাবা। আর এসইউভিতে ছিলেন নাবালক, তার সম্পর্কিত দাদা এবং মা। গাড়ি থেকে নেমে রাফিয়া টি- স্টলের দিকে সবে পা বাড়িয়েছেন, তখনই বচসা বেধে যায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। ইতিমধ্যে ছুরি বের করে রাফিয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কিশোর। তরুণীকে মাটিতে ফেলে এলোপাথাড়ি ছুরির কোপ মারতে থাকে সে। ওই সময় তরুণীকে জাপটে ধরে রাখে ওয়াসিম।
ভরসন্ধ্যায় জমজমাট বাইপাসের ধারে এমন ঘটনায় শিউরে ওঠে উপস্থিত জনতা। তারাই রক্তাক্ত রাফিয়াকে উদ্ধার করে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে আসে প্রগতি ময়দান থানার পুলিস। রাত সোয়া ৩টে নাগাদ এনআরএসে মৃত্যু হয় তরুণীর। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর গলায় একটি এবং হাতে দু’টি গভীর ক্ষত হয়েছিল। ট্যাংরার শীল লেনের বাসিন্দা তথা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক তরুণীর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে পুলিস। তারা জেনেছে, রাফিয়া আগে নারকেলডাঙায় থাকলেও বর্তমানে রাজারহাটে স্বামীর সঙ্গে থাকছিলেন। একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করতেন তিনি। তবে তাঁর শ্বশুরবাড়ির তরফে ‘পরকীয়া’র কথা অস্বীকার করা হয়েছে। আরও জানা গিয়েছে, কলিন্স লেনের বাসিন্দা বছর ১৬-র ওই নাবালক একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। তাকে জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে হাজির করানোর পর হোমে পাঠানো হয়েছে। ধৃত ওয়াসিম আক্রমকে শুক্রবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।