• কেমন কাটবে ২০২৫, জানান দিচ্ছে জানুয়ারিই
    এই সময় | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: ২০১১ থেকে ২০২৪ — গত ১৪ বছরে কলকাতায় এমন ঘটনা ঘটেছিল মাত্র একবার। ২০২১–এ জানুয়ারির শীতলতম দিনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা (১২.১ ডিগ্রি) ১২ ডিগ্রির নীচে নামেনি। ২০২৫–এ দ্বিতীয়বার এই ঘটনা ঘটল। নতুন বছরের প্রথম মাসের শেষ দিনটি পার করার পর দেখা গেল মাসের শীতলতম দিনে রাতের তাপমাত্রা ছিল ১২.৩ ডিগ্রি। অর্থাৎ ২০১১ থেকে ২০২৫ — ১৫ বছরে জানুয়ারির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কখনও এতটা বেশি হয়নি। শুধু কলকাতা কেন? ২০২৫–এর জানুয়ারিতে দিল্লির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠল ২৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে — গত ছ’বছরে উষ্ণতম।

    আবার গত ২৫ বছরে (২০০১-২০২৫) জানুয়ারির দ্বিতীয় উষ্ণতম রাতটি কলকাতা পেয়েছে শুক্রবার। এ দিন ভোরে পারদ ছিল ২১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১৫-র ২৮ জানুয়ারি তাপমাত্রা ছিল ২১.১ ডিগ্রিতে। তবে শীর্ষে রয়েছে ২০০৯-এর ২৬ জানুয়ারি— ২১.৬ ডিগ্রি।

    যে মেজাজে ২০২৪ শেষ করেছিলেন প্রকৃতি দেবী, সেই মেজাজ বহাল থাকল ২০২৫–এর জানুয়ারিতেও। শীতের আমেজ সেই ভাবে অনুভূতই হলো না। তাই আবহববিদদের পূর্বাভাস নিয়ে যে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল বর্ষশেষে, সেই আশঙ্কা নিয়েই নতুন বছরের প্রথম মাসটি কাটল।

    জানুয়ারিতে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি বা তার নীচে নামলে রীতিমতো উৎসবের আমেজ দেখা যায় শহরে। শীত নিয়ে দক্ষিণবঙ্গ, বিশেষ করে কলকাতার বাসিন্দাদের এই অতিরিক্ত উৎসাহ অন্যায় নয়। বছরের অন্তত সাত মাসই তো কাটে বিরক্তিকর গরমে আর ঘামে ভিজে। তাই কয়েকটা দিনের কাঁপুনি উপভোগ করার মতোই।

    পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মিটিওরোলজির (আইআইটিএম) ডেটাবেস বলছে, ২০১১ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়ে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ঘরে বা তার নীচে ছিল ছ’বার। ১১ ডিগ্রির ঘরে ছিল ৮ বার। সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ১২ ডিগ্রির ঘরে আটকে থাকার নজির ছিল মাত্র একবার। কিন্তু, ২০২৫–এর জানুয়ারিতে আরও একবার সেই ঘটনা ঘটল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো প্রাথমিক ভাবে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে বলা যায়, সদ্য শেষ করা জানুয়ারির প্রথম ২২ দিনের গড় তাপমাত্রাই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। শেষ ন’দিন অবশ্য গড় তাপমাত্রা কিছুটা কমে।

    দক্ষিণবঙ্গের ক্ষেত্রে অবশ্য জানুয়ারির প্রথম ১৫ দিন তবু কিছুটা শীতের অনুভূতি পাওয়া গিয়েছিল। মাঘ পড়ার থেকে আর লেশমাত্র ছিল না। একই সঙ্গে আলিপুর হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, শহরে শেষ বৃষ্টি হয়েছিল ২১ ডিসেম্বর। গোটা জানুয়ারিতে একটুও বৃষ্টি পায়নি দক্ষিণবঙ্গ। বাংলার জন্য জানুয়ারি ‘শুষ্কতম’ মাস হলেও এই মাসেও কলকাতা গড়ে ১৫ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি পায়। কিন্তু এ বছর বৃষ্টি হয়নি। শহরের উষ্ণতম রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে সাড়ে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি ছিল।

    ২০২৪–এর একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে জলবায়ু বিষেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, ২০২৫ মানুষের ইতিহাসের উষ্ণতম তিনটি বছরের মধ্যে অন্যতম হতে চলেছে। বছর শেষ হতে এখনও বহু দেরি। কিন্তু, নতুন বছরের প্রথম মাসেই উষ্ণ জানুয়ারির যে ‘ট্রেলার’ দেখা গেল, তাতে বছরের বাকি মাসগুলোয় প্রকৃতি যে কোন সিনেমা দেখাতে চলেছেন তার ইঙ্গিত ভালোই পাওয়া গেল। তাই ‘মর্নিং শোজ় দ্য ডে’ প্রবচনটি অন্তত ২০২৫–এর আবহাওয়ার জন্য সত্যি না হোক — এমন প্রার্থনাই থাকল।

  • Link to this news (এই সময়)