• কালা জাদু, ভূত নয়, জীবনের গপ্পো ‘গল্পস্বল্পে’
    এই সময় | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: চার রকমের গপ্পো কখনও পুরোনো হয় না। এমনটাই মনে করতেন লীলা মজুমদার। তাঁর মতে, প্রেমের গল্প, বাঘের গল্প, ভূতের গল্প আর ডাকাতের গল্প— এই চার রকমের গল্প চিরনতুনের তালিকার চিরস্থায়ী সনদ নিয়ে বসে আছে। এখনকার পরিস্থিতি দেখলে কি তিনি এমন একটা তালিকা করতে পারতেন? তন্ত্র–মন্ত্র, কালা জাদু এবং নানা ধরনের ভূত–প্রেত–পিশাচের ভিড়ে বাকি গল্পরা কি অস্তিত্বসঙ্কটে পড়বে এ বার? জীবনের কথা শোনানোর কথকরা কি ‘বিপন্ন প্রজাতির জীব’–এ পরিণত হবেন? এমন আশঙ্কা অমূলক বলেই উঠে এল শুক্রবার সন্ধের আলোচনায়।

    কলকাতা বইমেলার ১৯০ নম্বর স্টলে প্রকাশিত হলো ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সি ৫০ জন লেখক–লেখিকার ছোটগল্পের সঙ্কলন ‘গল্পস্বল্প’। বইমেলায় ১৯০ নম্বর স্টলটি ‘এই সময় সংবাদপত্র’–এর। এ দিন এখানেই ‘গল্পস্বল্প’ প্রকাশ করলেন সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদার এবং কবি বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। বইমেলায় প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা অথবা পত্র–পত্রিকার স্টল থেকে প্রকাশিত হয় বহু বই এবং পত্রিকা। তাদের থেকে ‘গল্পস্বল্প’ আলাদা কোথায়? এর উত্তর দিলেন তিলোত্তমা।

    ঘটনাচক্রে তিনিই এই বইয়ের অতিথি সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর কথায়, ‘এই বইয়ে যাঁদের লেখা প্রকাশিত হয়েছে, তাঁরা কেউ এখনও তথাকথিত বিখ্যাত নন। তাঁদের বয়স ১৮ বছর থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে।’ এখানেই শেষ নয়। প্রতিটা গল্পের অন্তত একটি করে অলঙ্করণ রয়েছে। সেই অলঙ্করণ এবং বইয়ের প্রচ্ছদও যাঁদের হাতে তৈরি, তাঁরাও ১৮ থেকে ৪৫–এর মধ্যে।

    কী রয়েছে এই গল্পগুলোয়? বইটা কি আদৌ সংগ্রহে রাখার মতো? জবাবে কবি বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি পুরোটা এখনও পড়ে উঠতে পারিনি। সামান্য উলটে–পাল্টে দেখেছি মাত্র। যে টুকু দেখেছি, তাতে অবাক হয়েছি। এখানে জীবনের গল্প আছে। মানুষের কথা আছে। ব্ল্যাক ম্যাজিকের রাবিশ নেই। ভূত–পেত্নিদের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই বলছি, ওদের কথাও নেই।’ বইটি সম্পাদনা করার অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে গিয়ে তিলোত্তমা বলেন, ‘দেড়শোর বেশি গল্পের মধ্যে থেকে ৫০টি বেছে নিতে হয়েছে। তার মানে একেবারে নতুন অন্তত ১৫০ জন লেখক–লেখিকা তৈরি হচ্ছেন। এটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় আশা। বাংলার সাহিত্য রসের ধারা শুকিয়ে যাচ্ছে না।’

    স্কুলের বাংলার মাস্টারমশাই শিখিয়েছিলেন, ‘সর্ব জনের সহিত চলে যে, সে–ই সাহিত্য।’ সেই মাস্টারমশাই আজ আর নেই। কিন্তু তাঁর শেখানো কথাটা চিরকালীন হয়ে থেকে গিয়েছে। বাংলার ‘সর্বজন’–কে ‘মানুষের কথা’ এবং ‘জীবনের কাহিনি’ শুনিয়ে সঙ্গে চলার মানুষ ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।

  • Link to this news (এই সময়)