‘সানডে হো ইয়া মানডে, রোজ খাও আনডে’— এই স্লোগানের সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। প্রোটিনের জোগানদাতা হিসেবে ডিমের জুড়ি মেলা ভার। ডিম দিয়ে যে কত ধরনের পদ তৈরি হয় তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু ডিমের খোসা এতদিন সে অর্থে কোনও কাজেই লাগত না। এ বার সেই অব্যবহৃত ডিমের খোসাকে কাজে লাগিয়ে লক্ষ্মীলাভের স্বপ্ন দেখছে রাজ্য প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তর।
নবান্ন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, রাজ্য প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের অধীনস্ত সংস্থা ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের উদ্যোগে নদিয়ার কল্যাণীতে তৈরি হচ্ছে এগেসেল মেমব্রেন (এগ পাওডার) কারখানা। যেখানে পরিত্যক্ত ডিমের খোসা দিয়ে তৈরি হবে ক্যালসিয়াম–সহ বিভিন্ন ধরনের ঔষধী দ্রব্য। যা থেকে বিপুল টাকা রোজগার হতে পারে। নবান্নের কর্তাদের দাবি, দেশের মধ্যে এই প্রথম সরকারি উদ্যোগে এই ধরনের কারখানা তৈরি হতে যাচ্ছে।
সংস্থার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কল্যাণী–সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক বড় বড় সরকারি হ্যাচারি রয়েছে। সেখানে কৃত্রিম উপায়ে ডিম থেকে মুরগির বাচ্চা তৈরি হয়। ডিম থেকে বাচ্চাটা বের হওয়ার পর খোসাটা পড়ে থাকে। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে তা থেকে বিভিন্ন ধরনের উপাদান তৈরি করা হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, মুরগি অথবা হাঁসের ডিমের উপর ভাগে যে শক্ত অংশ থাকে তা থেকে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম পাওয়া যাবে। যা ওষুধ তৈরিতে কাজে লাগবে। বাজারে যে সব পুষ্টিকর খাবার বিক্রি হয় তাতেও এই উপাদান ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া, ডিমের ভিতরে এক ধরনের সাদা রংয়ের পাতলা আস্তরণ থাকে। তাকে বলে এগসেল মেমব্রেন। যেটা থেকে তৈরি হবে কোলাজ়েন। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, মেডিক্যাল সায়েন্সে কোলাজেনের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারিক উপযোগিতা রয়েছে। কর্নিয়া রিপেয়ারিং, জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, টিস্যু এবং স্কিন গ্রাফটিং– সহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় কোলাজেন ব্যবহৃত হয়। সেজন্য বাজারে এর বিপুল চাহিদা রয়েছে। যার বর্তমান মূল্য কেজি প্রতি প্রায় সাড়ে ১২ হাজার টাকা।
ওয়েস্ট বেঙ্গল লাইভস্টক ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এক কেজি কোলাজেন বানাতে ১৫–২০ কেজি ডিমের খোসা লাগবে। তা থেকে ৩০–৩৫ কেজির মতো ক্যালসিয়াম পাওয়া যাবে। প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, কল্যাণীতে প্রতিদিন এক হাজার কেজি কোলাজেন তৈরি হবে। তা থেকে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকা রোজগার হবে সরকারের।
ইন্ডিয়ান ভেটেরেনারি অ্যাসোসিয়েশনের তরফে গুরুচরণ দত্ত বলেন, ‘এই প্রকল্প আগামী দিনে অন্যান্য রাজ্যকে দিশা দেখাবে। গরম কালে বিপুল পরিমাণ ডিম নষ্ট হয়ে যায়। কারণ অন্যান্য জিনিসের মতো ডিমকে বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। ফলে মুরগি প্রতিপালকরা আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েন। এগ মেমব্রেন কারখানা চালু হলে সেই সমস্যা অনেকটাই মিটবে।’