• হাইকোর্টে ধাক্কা সন্দীপদের, সিবিআই-এর অন্য কোর্টে
    এই সময় | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়: আরজি করের দুর্নীতি মামলায় দ্রুত বিচার শুরুর জন্য সিবিআই কোর্টকে সময় বেঁধে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আর সেই নির্দেশ কার্যকর করতে আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালত সক্রিয় হতেই কার্যত লেজেগোবরে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এবং অভিযুক্তরা।

    সিবিআই–কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, শুক্রবার দুপুর ১টার মধ্যে আলিপুর আদালতে সব নথি জমা দিতে হবে। কিন্তু এ দিন কেন্দ্রীয় সংস্থাটি সব নথি জমা করতে পারেনি। ফলে বৃহস্পতির পরে শুক্রবারও সিবিআই বিশেষ আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় তাদের। আবার চার্জ ফ্রেম করতে সিবিআই কোর্টকে ৭ দিনের যে সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল, তা যথেষ্ট নয় বলে দাবি করে এ দিন হাইকোর্টে আবেদন করেন সন্দীপ ঘোষ–সহ অন্য অভিযুক্তদের আইনজীবীরা।

    কিন্তু বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ স্পষ্ট করে দেন, ৭ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। তাঁর তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ, ‘আরজি কর দুর্নীতি মামলায় বিচারে সিস্টেম্যাটিক ডিলে করা হচ্ছে। কে করছেন, কেন করছেন আমি সে দিকে যাচ্ছি না। কিন্তু গত নভেম্বরে চার্জশিট দেওয়ার পরেও ট্রায়ালে দেরি হচ্ছে, এটা লক্ষ্য করেছি। রাজ্যের আরও আগে কনসেন্ট দেওয়া উচিত ছিল।’ আগের নির্দেশে বিশেষ পরিবর্তন হবে না, আবেদনকারী আইনজীবীদের তা বুঝিয়ে তাঁদের সিবিআই কোর্টের নির্দেশমাফিক পদক্ষেপের পরামর্শ দেন বিচারপতি ঘোষ।

    আদালত সূত্রের খবর, আরজি কর দুর্নীতি মামলায় মঙ্গলবার চার্জগঠন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এই মামলায় গত সপ্তাহে তদন্তে অগ্রগতির রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দেয় সিবিআই। সেই শুনানির আগের দিনই সন্দীপ ঘোষ, আশিস পান্ডেদের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর জন্য রাজ্য কনসেন্ট দিয়েছে বলে সিবিআই আদালতকে জানায়। তার পরেই বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ ৭ দিনের সময় বেঁধে মূল মামলার বিচার শুরুর নির্দেশ দেন সিবিআই কোর্টকে। সেই নির্দেশেই আপত্তি জানিয়ে এ দিন সন্দীপদের আইনজীবীরা বলেন, হাইকোর্টের ওই নির্দেশের ফলে সিবিআই তিন দিনের মধ্যে চার্জ ফ্রেম করতে চাইছে, যা বাস্তবে অসম্ভব। তাই হাইকোর্টের আগের দেওয়া রায়ে পরিমার্জনের আবেদন করেন তাঁরা। বিচারপতি ঘোষ তাতে আমল না–দিয়ে অতিরিক্ত সলিসিটার জেনারেলকে নোটিস পাঠিয়ে ফের আবেদন করার পরামর্শ দেন। আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা সিবিআই কোর্টে আপনাদের বক্তব্য পেশ করুন।’

    কিন্তু সিবিআই কোর্টে আবার অস্বস্তিতে পড়ে যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। বৃহস্পতিবারই সিবিআই অফিসারকে শো–কজ় করেছিল আলিপুরের বিশেষ আদালত। এর পর শুক্রবার সম্পূর্ণ নথি হাজির করতে না–পারায় বিচারক সুজিতকুমার ঝা–র ভর্ৎসনার মুখে পড়ল সিবিআই। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, এ দিন আদালতে শো–কজ়ের লিখিত জবাব জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিচারককে সিবিআই–এর আইনজীবী জানান, তাঁরা ৭০ শতাংশ ডকুমেন্ট এনেছেন। ক্ষুব্ধ বিচারক বলেন, ‘কেন ১০০ শতাংশ নথি নেই? কেন ৭০ শতাংশ নথি এনেছেন?’ সিবিআই তদন্তকারী অফিসার মণীশ উপাধ্যায় বলেন, ‘কিছু টেকনিক্যাল গ্লিচ আছে।’ কিন্তু সে যুক্তি শুনতেই চাননি বিচারক।

    সিবিআই–এর আইনজীবী বলার চেষ্টা করেন, হাজার হাজার পাতার নথি ফোটোকপি করতে সময় লাগছে। বৃহস্পতিবার রাতভর কাজ চলেছে। কিন্তু বিচারকের পাল্টা প্রশ্ন, ‘কেন ফোটোকপি করছেন? স্ক‍্যান করে পেন ড্রাইভে দিতে পারতেন তো!’ পেন ড্রাইভে নথি নিতে অনেক সময় লাগবে, এই যুক্তি শুনে বিচারপতি বলেন, ‘রোজ অভিযুক্তদের (সন্দীপ–সহ পাঁচজন) সশরীরে আদালতে পেশ করা মুশকিল। সিবিআই নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে? নেবে না তো! ওটা তো আপনারা (সিবিআই) পুলিশের উপরে ছেড়ে দেবেন।’ এর পরেই সিবিআই আইনজীবী একদিন সময় চান। এ দিন অভিযুক্তদের আইনজীবীরা জানান, তাঁরা পূর্ণাঙ্গ নথিই নেবেন, ৭০ শতাংশ নয়। তখন সিবিআই–এর তরফে জানানো হয়, আজ, শনিবার বাকি ৩০ শতাংশ নথি আনা হবে। আজ ফের সন্দীপ–সহ পাঁচ অভিযুক্তকে সশরীরে আদালতে আসতে হবে।

  • Link to this news (এই সময়)