দর্শকদের বোকা ভাবায় মোটা দাগের ছবি তৈরি হয় - আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত
এই সময় | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
দেবলীনা ঘোষ
অন্য সময় প্রাইম: ‘মায়ানগর’ বা ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন ক্যালকাটা’ ছবিটার গল্পটা কেমন?
আদিত্য বিক্রম: সন্তান হারানো এক মা, বিবাহবিচ্ছিন্না স্ত্রী নিজের নতুন পরিচয়, ভালোবাসা, স্বাধীনতা খোঁজে ডেসপারেটলি। কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি সে বুঝতে পারে, সেই একা নয়, আছে আরও অনেকে। যারা একই রকম ক্ষুধার্ত, এই সব কিছুর জন্য। কলকাতা শহরটা যেমন, সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এই ছবিতে। ২০১০ থেকে যা-যা খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে, তার মধ্যে সরকার পরিবর্তন হয়েছে, আইটি-র একটা বুম হয়েছে, টেকনোলজি, ফোন—শুধু বাংলা নয়, সারা বিশ্বেই এই টেকনোলজির পরিবর্তনটা এসেছে। আমার গল্পটা কলকাতা কেন্দ্র করে। কারণ কলকাতা আমার বাড়ি। এখন মানুষের অ্যাসপিরেশন, ড্রিম আগের তুলনায় অনেক বেশি। সারাক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্যদের দেখা, তাঁদের মতো জীবন চাওয়া, এখন এটা নিয়েই সব কিছু। দর্শকরা নিজের শহরটাকেই দেখতে পাবেন ফিল্মে।
অন্য সময় প্রাইম: ছবিটা তৈরির তিন-সাড়ে তিন বছর পর মুক্তি পাচ্ছে। এত দেরি হলো কেন?
আদিত্য বিক্রম: আমি ছবিটা লেখা শুরু করি ২০১৫-তে। তার পর ফান্ডিং করতে-করতে ২০১৯-এ শুট করি। ২০২০-২১ তো চলে গেল কোভিডে। ২০২১-এর সেপ্টেম্বরে ছবিটা দেখানো হয় ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। তার পর আরও কিছু ফেস্টিভ্যালে যায় ছবিটা। রিলিজ়টা আমাদের তখনই করার কথা ছিল, ২০২২-এ। কিন্তু তখন মুক্তি পেলো না কারণ আমাদের যিনি মূল প্রযোজক ছিলেন, মুম্বইয়ের, তাঁর কোম্পানি ডিসলভ করে যায়। ওরা পুরোপুরি হাত তুলে দেয়। তার পর খুব অসুবিধায় পড়তে হয়েছিল। কারণ ছবিটার বেশ কিছু কাজ বাকি ছিল। আমরা তখন নিজেদের টাকা দিয়ে ছবিটা কমপ্লিট করলাম। একজন অভিনেতা, অরিন্দম ঘোষ, যিনি আমেরিকায় থাকেন, উনিও অনেকটা টাকা দিলেন ছবিটা শেষ করার জন্য। তার পর কলকাতার এক নামী প্রযোজনা সংস্থা এগিয়ে এসে ছবিটা মুক্তির দায়িত্ব নিল। তাই এ বার ছবিটা রিলিজ় করা হচ্ছে।
অন্য সময় প্রাইম: ছবিটার প্রচার কিছুটা দেরিতে শুরু হয়েছে। এই নিয়ে কোনও চিন্তা আছে কি?
আদিত্য বিক্রম: না, সে রকম চিন্তা হচ্ছে না। আমার দর্শকের প্রতি আস্থা আছে। আমার মনে হয় জেনারেলি আমরা অডিয়েন্সকে আন্ডারএস্টিমেট করি। বোকা ভাবি। সেই জন্য অনেক সাধারণ, মোটা দাগের ছবি তৈরি হয়। শুধু কলকাতার কথা বলছি না। মুম্বইয়ের কথাও বলছি। কিন্তু দর্শকরা নতুন, চ্যালেঞ্জিং সাবজেক্ট দেখতে পছন্দ করেন। বাংলাতে নানা রকম ছবি তৈরি হয়। প্রোমোশন আরও একটু আগে থেকে শুরু করলে হয়তো ভালো হতো, কিন্তু উপায় ছিল না। তাও আমার মনে হয় যেটুকু প্রচার হচ্ছে যথেষ্ট। কারণ মানুষের অ্যাটেনশন স্প্যান খুব কম।
অন্য সময় প্রাইম: বাঙালি দর্শকের রুচি কি বদলেছে মনে হয়?
আদিত্য বিক্রম: আমি কলকাতায় যেহেতু থাকি না, তাই বিশদে বলতে পারব না। তবে বাঙালি দর্শক ভীষণ প্রোগ্রেসিভ। মুম্বইয়ের অডিয়েন্সের নিরিখে বলব, তাঁদের বক্তব্য একটা ‘পাঠান’-এর মতো ছবিই দেখব। বাকি সব ফ্লপ হয়ে যাবে। ওই ব্যাপারটা কলকাতায় নেই। বাঙালিরা এনি ফর্ম অফ সিনেমার সঙ্গে টিউনড। ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’-ও সবাই দেখছেন আবার ‘খাদান’ও সবাই দেখেছেন। ‘এই রাত তোমার আমার’-ও দেখছেন আবার শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের ফিল্মও দেখছেন। আমার মনে হয় বাঙালি দর্শকের নানা ধরনের ছবি দেখার একটা খিদে রয়েছে।
অন্য সময় প্রাইম: চোখ ধাঁধানো স্টারকাস্ট নয়, গল্পই প্রাধান্য পায় আপনার ফিল্মে। এই নিয়ে সমস্যা হয়েছে কোনও দিন?
আদিত্য বিক্রম: আমি সে ভাবে প্রযোজকদের সঙ্গে কাজ করিনি কোনও দিন। তাই এই চাপটা অনুভব করিনি। তবে সেটাই স্বাভাবিক হতো। কারণ একটা ফিল্মের তো ব্যবসার দিকটাও দেখতে হবে। কারণ কারও একটা দমে চলতে হবে তো ছবিটা। তাই যাঁরা টাকা দেবেন, তাঁরা তো ফিল্মটাকে সিকিয়োর করার জন্য কিছু চাইতেই পারেন। আমি এটার মধ্যে কোনও ভুল দেখতে পাই না।
অন্য সময় প্রাইম: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজ়াইন থেকে পড়াশোনাটা কি ছবি বানাতে সাহায্য করে?
আদিত্য বিক্রম: অবশ্যই ভিস্যুয়াল স্টোরি টেলিং-এর ক্ষেত্রে ডিজ়াইনিং ব্যাকগ্রাউন্ডটা কাজে লাগে। তবে শুধু পড়াশোনা নয়, কী ভাবে আমি বড় হয়েছি, কাদের সঙ্গে মিশেছি, ছোটবেলাটা কেমন কেটেছে— সব কিছুই কিন্তু প্রভাব ফেলে একটা ছবি তৈরির ক্ষেত্রে।
অন্য সময় প্রাইম: ‘অাসা যাওয়ার মাঝে’-র শেষ দৃশ্যটা ভিস্যুয়ালাইজ় করেছিলেন কী ভাবে?
আদিত্য বিক্রম: আমি একটা ফিলিং ইভোক করতে চেয়েছিলাম। ভিস্যুয়ালাইজ়েশনের কথা পরে ভেবেছি। ছবিটা আমার কাছে খুবই ব্যক্তিগত। ওই দৃশ্যটাও। আমার মনে হয়েছিল অনুভূতিটা যেন ফুটে বেরোয়। সেটা পাইন ফরেস্টে হোক বা সমুদ্রের ধারে। আমি নিশ্চিত আলাদা-আলাদা পরিচালক দৃশ্যটা অন্য ভাবে করতেন।
অন্য সময় প্রাইম: শেষ কোন বাংলা ছবি দেখলেন?
আদিত্য বিক্রম: ‘খাদান’। ফার্স্ট ডে দেখেছি। আমার দারুণ লেগেছে।
অন্য সময় প্রাইম: ‘মায়ানগর’ নিয়ে দর্শকদের কী বলতে চান?
আদিত্য বিক্রম: প্লিজ় ছবিটা সবাই দেখুন। এখানে শুধু এলিট বাঙালি নয়, সব ধরনের চরিত্র আছে। ছবিটা সবার জন্য বানানো। কলকাতার পালস আছে ছবিটায়। অভিনেতারা অসাধারণ অভিনয় করেছেন। বাংলা ছবিতে এ রকম পারফরম্যান্স খুব কমই দেখা যায়।