• রাত নামলেই ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে গ্যারগেন্ডা চা বাগান
    এই সময় | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • এই সময়, আলিপুরদুয়ার: বেলা পড়লেই দরজা–জানলা বন্ধ করার হিড়িক পড়ে যায় আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট ব্লকের গ্যারগেন্ডা চা বাগানে। বন্যপ্রাণীদের ভয়ে ওই চা বাগানের শ্রমিকদের রাত পাহারা এখন রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ কোটি টাকার উপরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগম।

    তবে বাগানে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলেও, বাগানটি চালু আছে। কাঁচা চা পাতা অন্য চা বাগানে বিক্রি করে চালু রাখা হয়েছে বাগানটি। দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পরে সাত বছর আগে রাজ্য সরকার চা বাগানটি তুলে দেয় মেরিকো ইন্ডাস্ট্রিজ় প্রাইভেট লিমিটেডের হাতে। তারপর থেকে অবশ্য চা বাগানটি আর বন্ধ হয়নি।

    জঙ্গলে ঘেরা চা বাগানে প্রায়ই চিতাবাঘ ও হাতির আনাগোনা লেগে থাকে। আর রাত নামলে বাগান চলে যায় বুনোদের দখলে। টানা এক মাস ধরে এই পরিবেশ তৈরি হয়েছে গ্যারগেন্ডা চা বাগান জুড়ে। সাত বছর আগে এই চা বাগানেই চিতাবাঘের হানায় তিনটি শিশুর মৃত্যু হয়। পাল্টা হামলায় মারা যায় দু’টি চিতাবাঘ। ফলে ওই ইতিহাস এখনও স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে টাটকা রয়েছে। ফের যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে জন্য পালা করে রাত জাগছেন চা বাগানের স্টাফ থেকে শুরু করে চা শ্রমিকরা। প্রবল কুয়াশার কারণে রাত জাগার ঝুঁকিও দিনকে দিন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাগানের অফিস স্টাফ নারায়ণ খেড়া।

    তিনি বলেন, ‘বাগানের বিদ্যুত সংযোগ বহুদিন আগেই কেটে দিয়েছে বিদ্যুৎ দপ্তর। সন্ধ্যা নামতেই গোটা বাগান অন্ধকারে ডুবে যায়। আর এই বাগানে চিতাবাঘ ও হাতির তাণ্ডব প্রায় সারা বছর লেগে থাকে। বাগানের শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই আমরা রাত জেগে বনকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পাহারা দিচ্ছি।’ বাগান শ্রমিক মিলন লামা বলেন, ‘বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ অবিলম্বে টাকা মিটিয়ে বিদ্যুত সংযোগ পুনরায় চালু করা হোক।’

    নারায়ণ মাহালি নামে আর এক শ্রমিক বলেন, ‘ইতিপূর্বে আমাদের চা বাগানের কয়েকজন শিশু চিতাবাঘের আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছে। আমরা চাই না আর কোনও মায়ের কোল খালি হোক। সে জন্য আমরা পালা করে রাত জেগে পাহারা দেওয়ার কাজ শুরু করেছি।’ ওই চা বাগানের বর্তমান মালিক সুরজিৎ বক্সি বলেন, ‘বাগানের জমির লিজ় এখনও হাতে পাইনি। তবে খুব শীঘ্রই পেয়ে যাব বলে আশা করছি। প্রায় ৭ বছর ধরে ধার দেনা করে বাগানের শ্রমিকদের বেতন–সহ নানারকম সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছি। লিজ় না পাওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে পারছি না। অথচ প্রতি মাসে বাগানের শ্রমিকদের বেতন–সহ অন্য খাতে খরচ হয় প্রায় দুই কোটি টাকা। তবুও আমি শ্রমিকদের অভয় দিয়ে বলেছি, বাগান ছেড়ে আমি যাব না। সবাইকে একটু ধৈর্য ধরার আবেদন জানাচ্ছি।’

  • Link to this news (এই সময়)