রুটিন নিয়ে গোলমাল, স্কুলের মধ্যেই প্রধান শিক্ষককে বেধড়ক মারধর...
আজকাল | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: স্কুলের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠক চলাকালীন নিউ ফরাক্কা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মনিরুল ইসলামকে ব্যাপক মারধর করার অভিযোগ উঠল ওই স্কুলেরই কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। গুরুতর আহত ওই শিক্ষক বর্তমানে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই প্রধান শিক্ষকের বাম পা ভেঙে যাওয়া ছাড়াও তাঁর চোখে এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, স্কুলে গন্ডগোলের ঘটনার কথা তাঁরা জানতে পেরেছেন। তবে আহত ওই চিকিৎসকের তরফ থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি।
হাসপাতাল শয্যা থেকে আক্রান্ত প্রধান শিক্ষক মহম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, '২০১৯ সালে আমি নিউ ফরাক্কা হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই কিছু শিক্ষক এবং অন্য কয়েকজন ব্যক্তি তাঁদের ব্যক্তিগত স্বার্থে আমার পেছনে লাগতে শুরু করেন। আমি যাতে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ ছেড়ে দিই তার জন্য আমার উপর দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে চাপ দেওয়া হচ্ছে।'
তিনি জানান, 'সম্প্রতি স্কুলের নতুন অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল দায়িত্বভার নেওয়ার পর তাঁরা বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের রুটিন তৈরি করেছে। কিন্তু সেই রুটিন নিয়ে ১২-১৩ জন শিক্ষক আমাকে তাঁদের অসুবিধার কথা জানিয়েছেন।'
প্রধান শিক্ষক বলেন,' শুক্রবার স্কুল চলাকালীন কয়েকজন শিক্ষক তাদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর আমি নতুন রুটিন সাময়িকভাবে স্থগিত করে দিই। এরপরই আমার স্কুলের চারজন শিক্ষক-মহম্মদ তারিফ হোসেন-সহ আরও তিন শিক্ষক স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অরুন্ময় দাসকে সঙ্গে নিয়ে আমার ঘরে ঢুকে বাকি শিক্ষকদেরকে বার করে দেন।' তাঁর অভিযোগ, 'ঘরে ঢুকেই তারিফ হোসেন আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে শুরু করেন এবং আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সেই সময় আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে লাথি -ঘুসি- চড় ছাড়াও শক্ত কিছু দিয়ে পিঠে -বুকে -পায়ে ব্যাপক মারধর করা হয়।' প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ গোটা ঘটনাটি ঘটেছে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অরুন্ময় দাসের উপস্থিতিতে।
আহত অবস্থায় ওই শিক্ষককে প্রথমে ফরাক্কার একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে রাতের দিকে ওই চিকিৎসককে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাতেই ওই চিকিৎসকের পায়ে একটি অপারেশন করেন চিকিৎসকরা। প্রধান শিক্ষক জানান-শনিবার বিকেলের মধ্যে আমার স্ত্রী ফরাক্কা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন।
অন্যদিকে তাঁর উপস্থিতিতেই স্কুলের মধ্যেই দুই শিক্ষকের 'মারামারি' হয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অরুন্ময় দাস। তিনি বলেন,' একটি রুটিন নিয়ে গতকাল যে ঘটনাটি ঘটেছে তা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। আমি দু'পক্ষকে থামানোর চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পারিনি।'
প্রধান শিক্ষককে মারধরের এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শিক্ষক মহম্মদ তারিফ হোসেন বলেন,' প্রধান শিক্ষকই প্রথমে আমাকে কলার ধরে মারধর করার চেষ্টা করেন। আমি কেবলমাত্র আত্মরক্ষার চেষ্টা করেছি। সেই সময় প্রধান শিক্ষক পড়ে যান এবং তাতেই তিনি আহত হয়েছেন।'
ফরাক্কার বিধায়ক মনিরুল ইসলাম জানান, 'আজই আমি গোটা ঘটনাটি জানতে পেরেছি। দ্রুত আমি দু'পক্ষের শিক্ষকদের নিয়ে বসে গোটা ঘটনাটি সমাধানের চেষ্টা করছি।'