প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ, বাঁকুড়ায় নাবালিকা মেয়েকে বিষ খাইয়ে ‘খুন’ মায়ের
প্রতিদিন | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
অসিত রজক, বিষ্ণুপুর: নাবালিকা কন্যাকে বিষ খাইয়ে খুনের অভিযোগ উঠল মায়ের বিরুদ্ধে। বিবাহবিচ্ছিন্ন স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন প্রাক্তন স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়ার সোনামুখী থানা এলাকায়। শুক্রবার অভিযুক্ত গৃহবধূকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তবে কেন নিজের মেয়েকে খুন করলেন মা? ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে খুন করা হয়েছে বলে অনুমান। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে সোনামুখীর নিবাসী চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে বিয়ে হয় মৌ গোস্বামীর। ২০১২ সালে তাদের একটি কন্যা সন্তান হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। সেই কারণেই ২০২১ সালে মোটা অংকের টাকা খোরপোষের বিনিময়ে ওই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদ হয়।
এর নাবালিকা কন্যাকে নিয়ে মৌ পাঁচালে বাপের বাড়িতে চলে আসেন। সেই থেকে দাদু দিদিমার কাছে বড় হচ্ছিল নাবালিকা। কিছুদিন পর বাঁকুড়ারই ওন্দা থানা এলাকার এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় অভিযুক্তের। দ্বিতীয় বিয়ে হওয়ার পরে প্রথম পক্ষের মেয়েকে নিজের সঙ্গে নতুন শ্বশুড়বাড়িতে নিয়ে যাননি মহিলা। তবে মাঝে মাঝে মেয়েকে দেখতে আসতেন। এদিকে মেয়ে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে থাকে। কিন্তু শত জিজ্ঞাসা করলেও মা বা দাদু, দিদা কারও থেকে কোনও সদুত্তর সে পায়নি।
সম্প্রতি সে বাবার কথা জানতে পারে। চিরঞ্জিৎ যে সোনামুখীতেই রয়েছেন সেই খবরও পায় সে। এরপর নিজেই বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে। চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর অভিযোগ, মেয়ে তাঁর কথা জানতে পারায় দাদু, দিদিমা থেকে তার মা এবং তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্বামী মেয়েকে বিভিন্ন রকমভাবে অত্যাচার করতো। এই সমস্ত ঘটনা নিয়ে মা ও মেয়ের মধ্যে চূড়ান্ত অশান্তি লেগে থাকত।
আরও অভিযোগ, ২০২৪ সালের ১ জুলাই মৌ বাপের বাড়িতে এসে দুপুর বেলা মেয়েকে বিষ খাওয়ায়। মেয়ে হাসপাতালে রয়েছে সেই খবর জানতে পেরে গিয়ে দেখেন কন্যার মৃত্যু হয়েছে। তার নাক এবং চোখ দিয়ে সবুজ রঙের তরল পদার্থ গড়িয়ে পড়ছিল বলে জানিয়েছেন চিরঞ্জিৎ। হাসপাতাল থেকে তিনি জানতে পারেন মেয়ে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল।
এরপরই চিরঞ্জিৎবাবু মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে বিষ খাইয়ে খুন করার জন্য মা মৌ গোস্বামী, দিদিমা মালতি গোস্বামী, দাদু অমলাঙ্গ গোস্বামী এবং মৌয়ের দ্বিতীয় পক্ষের স্বামীর নামে সোনামুখী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করে। একাধিক বার অভিযুক্তদের ডেকে জেরা করে পুলিশ। সবদিক খতিয়ে দেখে শুক্রবার মৃত নাবালিকার মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দাদু, দিদিমার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও পুলিশি তদন্তে দেখা গেছে তাঁরা ওই ঘটনার সঙ্গে কোনভাবেই যুক্ত ছিলেন না। তাই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এ বিষয়ে বিষ্ণুপুরের এসডিপিও সুপ্রকাশ দাস বলেন, “দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর অভিযুক্ত স্বীকার করেছেন তিনি মেয়েকে বিষ খাইয়েছেন। শুধু বয়ান নয় একাধিক তথ্য পাওয়ার পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে জানা গিয়েছে, প্যারাকোয়াট নামের বিষ খাওয়ানো হয়েছিল। বাড়িতে একার থাকার সুযোগে বিষ খাইয়েছিলেন তিনি।”