ধাওয়া করে টোটো থেকে নামিয়ে ইট দিয়ে থেঁতলে আধমরা করা হয়। অভিযোগ, তার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে চালানো হয় গুলি। তৃণমূল কর্মী সন্তোষ যাদবের নৃশংস খুনের ২৪ ঘণ্টা পরে মাত্র একজনকে আটক করেছে পুলিশ। কে এই সন্তোষ যাদব? বিরোধীদের কোন পাকা ধানে মই দিয়েছিলেন সাধারণ এক তৃণমূল কর্মী?
নির্বাচনের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে, নৈহাটি থেকে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। গত বছর উপনির্বাচনে প্রায় ১২ শতাংশ ভোট বাড়ায় তৃণমূল। তৃণমূলের জয়ী প্রার্থী সনৎ দে-র সঙ্গে নিকটতম বিজেপি প্রার্থী ব্যবধানও বেড়েছে অনেকটা। জেলার রাজনীতিতে কান পাতলেই শোনা যায়, বিধানসভায় প্রার্থীকে জেতাতে জানপ্রাণ দিয়ে খেটেছিলেন সন্তোষ। ’২৪-এর লোকসভা নির্বাচনেও ওই এলাকা থেকে পার্থ ভৌমিককে লিড পেতে সাহায্য করেছিলেন দলের একনিষ্ঠ ওই কর্মী।
নৈহাটির বিধায়ক সনৎ দে বলেন, ‘সন্তোষ আমার দলের কর্মী। শেষ নির্বাচনে দলের হয়ে প্রচুর খেটেছিল। গৌরীপুরে বিজেপির ভোট টেনে নেওয়ার কারিগর এই সন্তোষ। অর্জুন সিং সেই আক্রোশে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ২০২৪ সালেও এখানে আমাদের ফলাফল ভালো হয়েছিল। তার নেপথ্যে ছিল সন্তোষ।’ বিধায়ক দাবি করেছেন, পানিট্যাঙ্কির কাছেও সন্তোষকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছিল। গুলি কানের পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। থানায় অভিযোগ জানাতে টোটো করে যাচ্ছিলেন সন্তোষ। জোড়াবাড়ির সামনে মোটর সাইকেল করে কয়েকজন দুষ্কৃতী এসে দাঁড় করায়। মাথায় ইট ছুড়ে মারে। নাকের সোজাসুজি গুলি চালানো হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ফের ইট মেরে কপাল থেঁতলে দেওয়া হয়।
গোটা এলাকা এখনও থমথমে। লোকসভা ভোটের সময় এলাকায় একটি বিজেপি পার্টি অফিস খুলেছিলেন অর্জুন সিং। সেই সি ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের অভিযোগ উঠেছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। বিজেপি নেতা অর্জুন সিং বলেন, ‘মানুষকে বিভ্রান্ত করে এই সমস্ত ঘটনা ঘটাচ্ছে তৃণমূল।’ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে, এর সঙ্গে বিজেপির কোনও সম্পর্ক নেই বলে দাবি প্রাক্তন বিজেপি সাংসদের।
উল্লেখ্য, শুক্রবারের ঘটনার পর শনিবার ব্যারাকপুর পুলিশে কমিশনার-সহ একাধিক পদে রদবদল করা হয়। যা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলে। যদিও একে রুটিন বদলি বলে দাবি নবান্নের। পাড়ার ছেলের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ এলাকা। সন্তোষের হত্যাকারীরা শীঘ্রই ধরা পড়ুক, এমনটাই চাইছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।