• বাড়ল না ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর বাজেট, রেলের মোট বরাদ্দেও হেরফের নেই
    বর্তমান | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: শনিবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্প সংবলিত ‘পিঙ্ক বুক’ প্রকাশ করেনি রেল। কিন্তু এদিন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সাধারণ বাজেট পেশের পরেই রেলের একাধিক প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের যে ছবি সামনে এসেছে, তা থেকে স্পষ্ট যে এবারেও বাংলা একপ্রকার ব্রাত্যই। কারণ কলকাতার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করেনি রেল। দমদম এয়ারপোর্ট-নিউ গড়িয়া ভায়া রাজারহাট মেট্রো প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো বা কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের খাতে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ৯০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। পরে সংশোধিত বাজেট বরাদ্দে তা কমে হয় ৫০০ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরেও ওই খাতে ৫০০ কোটি টাকাই বরাদ্দ করা হয়েছে। দমদম এয়ারপোর্ট-নিউ গড়িয়া ভায়া রাজারহাট মেট্রো প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ৭২০ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। শুধুমাত্র জোকা-বিবাদী বাগ ভায়া মাঝেরহাট মেট্রো প্রকল্পে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে বরাদ্দের পরিমাণ সামান্য বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ৬৪ কোটি টাকা। রেলের বাজেট বরাদ্দের ফলে পরবর্তী দু’তিন বছরের মধ্যে যাত্রী পরিবহণে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। আরও ২০০টি নতুন বন্দে ভারত ট্রেন, ১০০টি নয়া অমৃত ভারত ট্রেন, ৫০টি নমো ভারত র‍্যাপিড রেল, ১৭ হাজার ৫০০টি নন-এসি জেনারেল কোচ যাত্রী পরিষেবা দেবে। এদিন সন্ধ্যায় বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। 


    যদিও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরের বাজেটে রেলের সার্বিক অর্থ বরাদ্দের পরিমাণও একই আছে। বরাদ্দের পরিমাণ ২ লক্ষ ৫২ হাজার কোটি টাকা। এরই পাশাপাশি রেল বোর্ডের আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে বেড়ে গিয়েছে ‘অপারেটিং রেশিও’। অর্থাৎ, ১০০ টাকা আয় করতে রেলের খরচের পরিমণে বেড়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে প্রতি ১০০ টাকা আয় করতে ৯৮ টাকা ৪৪ পয়সা খরচ করতে হবে রেলকে। এই খরচের পরিমাণ গতবারের তুলনায় ২২ পয়সা বেশি। রেল লাইনের নবীকরণ এবং বৈদ্যুতিকরণ খাতে গতবারের তুলনায় ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরে বরাদ্দের পরিমাণ নামমাত্রই বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ‘রোলিং স্টক’ খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ এক ধাক্কায় অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া হয়েছে এবারের বাজেটে। অর্থাৎ, কোচ উৎপাদনের ক্ষেত্রে টাকা কম দেওয়া হয়েছে। ৪৬ হাজার ২৫১ কোটি ৭০ লক্ষ থেকে কমিয়ে বরাদ্দের পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছে ৪৫ হাজার ৫৩০ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। 


    যে বুলেট ট্রেন নিয়ে এত মাতামাতি, তার বাস্তবায়নকারী সংস্থা ন্যাশনাল হাইস্পিড রেল কর্পোরেশন লিমিটেডের জন্যও বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ একই রেখে দেওয়া হয়েছে। পণ্যবাহী রেল করিডর খাতে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। শনিবার বাজেট ঘোষণায় সীতারামন জানিয়েছেন, ইনফ্রাস্ট্রাকচার সংক্রান্ত মন্ত্রকগুলিকে পরবর্তী তিন বছরের প্রকল্প তালিকা তৈরি করতে হবে। এর মধ্যে রেলমন্ত্রকও থাকছে। সাবার্বান এবং নন-সাবার্বান ট্রেন চলাচলে যাত্রী রাজস্ব আদায়ের ‘বাজেট’ বাড়ানো হয়েছে ২০২৫-২৬ আর্থিক বছরে। ট্রেনের এসি ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস, থ্রি টিয়ার এসি, স্লিপার ক্লাস, চেয়ার কার সহ সমস্ত ক্ষেত্রেই যাত্রী রাজস্ব আদায়ের ‘বাজেট’ বৃদ্ধি পেয়েছে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে। রেল বোর্ডের বাজেট ডকুমেন্টেই তা স্পষ্ট। রেলের যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি কি তাহলে সময়ের অপেক্ষা? 
  • Link to this news (বর্তমান)