বইপার্বণে চর্চায় বাগদেবীর বন্দনা, হাতেখড়ি না হওয়া খুদেরাও হাজির
বর্তমান | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
শান্তনু দত্ত, কলকাতা: বইমেলার প্রথম উইকেন্ড, মাসের শুরু আর রাত পোহালেই সরস্বতী পুজো— এমন ত্রহ্যস্পর্শ যোগ কালেভদ্রে আসে! আর সেই অমৃত যোগেই শনিবার ভিড়ে উপচে পড়ল করুণাময়ীর মেলাপ্রাঙ্গণ। সকাল থেকে রোদ ওঠেনি তেমন। হাল্কা ধোঁয়াটে রাস্তাঘাট। করুণাময়ী মেট্রো স্টেশন থেকে নেমে আসা তরুণ-তরুণীরা গায়ে পাতলা সোয়েটারও রাখতে পারছেন না। তবু বাঙালির নিজস্ব ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’র প্রাকলগ্নটুকু স্মরণীয় করে রাখতে সেলফির বিরাম নেই। তারপর জ্যাকেট খুলে এ হাত থেকে ও হাতে ঘোরাতে গেটে পা রাখা। কারও হাতে ফুলের ছোট্ট তোড়া। কেউ আবার প্রিয়জনের হাত জড়িয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছেন জার্মানি থেকে ফ্রান্স প্যাভিলিয়ন। মাঝে কোনও স্টলে বই পছন্দ হলে টুক করে ব্যাগে ভরে নেওয়া। সেই ভিড়েই খানিক আনমনা হয়ে হাঁটছিলেন বারাকপুরের স্বপ্না দে। আচমকা ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই জিভ কাটলেন, ‘ইস! অনেকটা দেরি হয়ে গেল! কাল পুজো। গিয়ে সব জোগাড় করতে হবে।’ ছেলেকে টানতে টানতে বেরিয়ে গেলেন মেলা থেকে।
ঘড়িতে তখন চারটে বাজেনি। তর্ক জমে উঠেছে গিল্ড অফিসের সামনেই। সরস্বতী পুজো কি রবিবারই? না সোমবার? কাউকে তোয়াক্কা না করেই গলা চড়ছে দুই কলেজ পড়ুয়ার। পাশেই কাটলেটে কামড় বসানো এক মধ্যবয়সি ফুট কাটলেন, ‘আরে বাবা, বইপার্বণে তো রোজই সরস্বতী পুজো!’ হেসে ফেলল দুই বন্ধু। আট নম্বর গেটের বাইরে তখন জড়ো হয়েছে খুদে খুদে কিছু মুখ। বয়স কতই বা তিন-চার! বাবা-মায়ের কড়া শাসনেও তাদের উৎসাহে ভাটা নেই। গেট টপকাতেই হুড়মুড়িয়ে দৌড়... কে আগে পৌঁছতে পারে আলো ঝলমলে স্টলগুলির কাছে। নিরাপত্তা রক্ষীরা হেসে উঠলেন। হাসিতে যোগ দিয়ে এক খুদের মা বলে উঠলেন, ‘কাল হাতেখড়ি। তার আগে বইয়ের সঙ্গে আলাপ করাতে নিয়ে এলাম।’
এদিন দুপুরে বইমেলার প্রেস কর্নারের বাইরে জড়ো হয়েছিল বেশ কয়েকজন স্কুল পড়ুয়ারা। সেই দলের অন্যতম একাদশ শ্রেণির সুমন রায়। জানাল, স্কুলে সোমবার পুজো। রবিবার ছুটি। তাই পুজোর সমস্ত কাজ সেরে বইমেলাতে ঢুঁ মারতে এলাম। সেখান থেকে খানিক এগিয়েই একটি স্টলে সরস্বতীর ‘পাঁচালি’ খুঁজতে ঢুকেছিলেন গড়িয়ার প্রতিমা দে। ভিড় সামলাতে সামলাতে নাজেহাল স্টলের কর্মী জানালেন, ‘নেই।’ নাছোড়বান্দা প্রতিমা দেবী, ‘পঞ্জিকা, হনুমান চালিশা রয়েছে। আর সরস্বতীর পাঁচালি নেই! কালই যে পুজো।’ চুপ থাকেননি ওই কর্মীও। তাঁর সরস জবাব, ‘আজ তো বাজেট! লক্ষ্মীর পাঁচালি নিয়ে যান।’