• স্কুলে সরস্বতীর মন্ত্রোচ্চারণে পঞ্চকন্যা ভাঙছে পুরুষতন্ত্র
    এই সময় | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • মোবাইল–ল্যাপটপের ভুল–ভুলাইয়াতেও বাংলার পড়ুয়ারা এখনও স্কুল–কলেজে সরস্বতী পুজোর আনন্দে মাততে ভোলেনি। পড়ুয়ামহলের সেই প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আজ, রবিবার (এবং কাল, সোমবার) সরস্বতী পুজো। দক্ষিণ শহরতলির নরেন্দ্রপুর এলাকার শ্রীখণ্ডা ইস্ট গড়িয়া এডুকেশনাল ইনস্টিটিউটের পাঁচ ছাত্রীর প্রস্তুতি অবশ্য শুরু হয়েছিল ঢের আগেই। পুজোর প্রাক্‌–মুহূর্তে একটু বেশিই আবেগে ভাসছে পঞ্চকন্যা। সঙ্গে চাপা উত্তেজনা, একটু যেন ভয়, টেনশন। কারণ, এ বছর স্কুলের সরস্বতী পুজোর শুধু আয়োজনই নয়, নবম–দশমের এই পাঁচ কিশোরী যে মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যে দিয়ে বাগদেবীর আরাধনাও করবে! রাত পোহালেই ওরা পাঁচজন হয়ে উঠবে পুরোহিত।

    বৈষম্য দূর করে নারীর ক্ষমতায়নে রাষ্ট্রকে এখনও আইন–বিধি তৈরি করতে হয়। নারী অবলা, পিছিয়ে পড়া—এমন শব্দবন্ধও এখনও ব্যবহার করেন অনেকে। অথচ ঋগ্বেদের যুগে নারীর শিক্ষাদীক্ষা, প্রতিষ্ঠা ছিল পুরুষের ঈর্ষার কারণ। নারীরা স্তোত্রপাঠ করতেন, পৌরোহিত্য করতেন। সে–সব অনেকাংশে বিস্মৃত হয়েছিল সমাজ। তবে পুরুষ এবং ব্রাহ্মণই একমাত্র পুজোয় মন্ত্রোচ্চারণের অধিকারী—সময়ের সঙ্গে এই ধারণাতেও ঘা পড়তে শুরু করে। এ বার সেই অধিকারের পরিসর বিস্তৃত করছে এই পঞ্চকন্যা—সায়নী দেবনাথ, সৌমিলী পাল, মেঘনা মণ্ডল, সুপ্রাপ্তি আদক, অনসূয়া ভট্টাচার্য।

    মাসখানেক আগে যে দিন প্রধান শিক্ষিকার ঘরে ডাক পড়েছিল, কী অন্যায় হয়েছে—এই ভেবে গুটি গুটি পায়ে দুরুদুরু বুকে ওরা ঢুকেছিল দরজা ঠেলে। সদ্য–প্রাক্তন প্রধান শিক্ষিকা শুক্লা বসু বহু দিন ধরেই চেয়েছিলেন এমন একটা অসাধ্যসাধন করতে। অবশেষে অন্য শিক্ষক–শিক্ষিকা এবং পরিচালন কমিটির সদস্যরা তাঁর প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ায় মেয়েদের পৌরোহিত্যে সরস্বতী পুজোর আয়োজনে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন।

    দিদিমণির প্রস্তাব (ওদের পাঁচ জনের কাছে নির্দেশই) প্রথমে সায়নী, সৌমিলীদের এতদিনের ধারণায় অবশ্য ধাক্কা দিয়েছিল। পুরুষ ব্রাহ্মণের মন্ত্রোচ্চারণে গলা মেলানোতেই তো ওরা অভ্যস্ত! তার পর থেকে অবশ্য বাড়িতে শুরু হয় প্রস্তুতি। কেউ সরস্বতী পুজো–পদ্ধতির বই উল্টেপাল্টে পড়েছে। আবার কেউ পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্র এই ক’দিনে একেবারে কণ্ঠস্থ করে ফেলেছে। কেউ আবার সংস্কৃত উচ্চারণ ঠিকঠাক করতে ইউটিউবেরও সাহায্য নিয়েছে। আচমন থেকে আসন–শুদ্ধি, পঞ্চ দেবতার পুজোর সঙ্গেই পুস্তিকা পুজোর পদ্ধতি অনেকটাই এখন জানা হয়ে গিয়েছে ওদের। গোটা পর্বটা ঠিকঠাক ভাবে ওদের দিয়ে উতরে দিতে গত কয়েক দিন ধরে স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সূরজ দাসও সতত সজাগ।

    পুজোয় পৌরোহিত্য করার সুযোগ পেয়ে গুগল ঘাঁটতে গিয়ে সায়নীরা জেনেছে অপালা, বিশ্ববারা, মৈত্রেয়ী, লোপামুদ্রাদের কথা। বৈদিক যুগের মহীয়সীদের নাম আর কাজে পুলকিত ওরা কিছুটা নিজেদের অজান্তেই আঘাত হেনে ফেলছে পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, ব্রাহ্মণ্যবাদেও।

  • Link to this news (এই সময়)