• বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড ২০ লক্ষ বছরে সর্বোচ্চ সীমায়
    এই সময় | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ‘এক বছরে ৪১.৬ বিলিয়ন টন’! ওয়ার্ল্ড মিটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজ়েশনের (ডব্লুএমও) অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী রিচার্ড বেটসের মন্তব্যটা ভয় ধরানোর পক্ষে যথেষ্ট। ২০২৪–এ বাতাসে কতটা কার্বন ডাই অক্সাইড মিশেছে, সেটা জানাতে গিয়ে এই বিপুল অঙ্কের উল্লেখ করেছে ডব্লুএমও, যা পরিবেশবিদদের কাছে অত্যন্ত আশঙ্কার।

    এখানেই থামেননি পরিবেশবিজ্ঞানীরা। আরও এক ভয়াবহ ঘটনার পূর্বাভাস দিয়েছেন। জানিয়েছেন, ২০২৫–এর মে মাস নাগাদ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ যে পর্যায়ে পৌঁছবে, গত ২০ লক্ষ বছরের মধ্যে তেমন কখনও হয়নি।

    শিল্প বিপ্লবের আগে অর্থাৎ ১৮৫০ সালের আগে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যত ছিল, আজ আর সেই জায়গায় নেই। প্রতি বছরই একটু একটু করে বেড়েছে গড় তাপমাত্রা। গত কয়েক বছর ধরেই পরিবেশবিজ্ঞানের বিভিন্ন সম্মেলনে আলোচনার প্রধান বিষয় থাকছে গড় তাপমাত্রাকে ‘বেঁধে ফেলার’। ২০১৫–র প্যারিস চুক্তিতে ঠিক হয়েছিল ১৮৫০–এ পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যত ছিল, গড় তাপমাত্রাকে তার চেয়ে ১.৫ ডিগ্রির বেশি কোনও মতেই বাড়তে দেওয়া যাবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গড় তাপমাত্রাকে ‘বেঁধে রাখা’ যায়নি। ২০২৪ মানুষের ইতিহাসের উষ্ণতম বছর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। দেখা গিয়েছে, এই বছরের গড় তাপমাত্রা ১৮৫০–এর চেয়ে ১.৫৫ ডিগ্রি বেশি ছিল।

    ২০২৪ শেষের পরেই ফের ‘দুঃসংবাদ’ দিয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। জানিয়েছেন, গত ২০ লক্ষ বছরের মধ্যে বায়ুমণ্ডলে সর্বোচ্চ পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড মেশার কথা। জানা গিয়েছে, আগামী মে মাসে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ হবে ৪২৯.৬ পিপিএম (পার্টস পার মিলিয়ন)। পিপিএম হলো কোনও মিশ্রণে বিশেষ একটি সামগ্রীর পরিমাণ মাপার একক। বাতাস যেহেতু বিভিন্ন গ্যাসের একটি মিশ্রণ, তাই বাতাসে কোনও নির্দিষ্ট গ্যাসের পরিমাণ মাপতে এই একক ব্যবহার করা হয়। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের হিসেব, ২০২৩ থেকে ২০২৪–এর মধ্যে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছিল ৩.৫৮ পিপিএম। পূর্বাভাস ছিল, এই এক বছরে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ২.৮৫ পিপিএম বাড়বে। কিন্তু সেই পূর্বাভাস ভুল প্রমাণ করে বাতাসে বিষ অনেকটাই বেশি মিশেছে।

    পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে দাবানলও বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড বেড়ে যাওয়ার একটা বড় কারণ। ২০২৩–এ শুধু দাবানলের জন্য বাতাসে অন্তত ৭.৩ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড মিশেছিল। ২০২৪–এও বহু জায়গায় দাবানল দেখা দিয়েছে। ভয়ের নতুন কারণ, বছরের শুরুতেই ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড এবং কার্বন ডাই অক্সাইড — এই তিনটি গ্যাস আসলে ‘হিট ট্র্যাপ’ হিসেবে কাজ করে। এই তিনটি গ্যাসের পরিমাণ যত বেশি বাড়বে, তাপমাত্রা তত বেশি বাড়তে থাকবে।

    ভারতের মৌসম ভবনের হিসেব, ২০২৪–এ তাপপ্রবাহ এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রার জন্য দেশে ৩,২০০–এর বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ২০২৫–এর জন্য আবহবিদদের পূর্বাভাস, এ বছর ২৮টি দেশ ‘চরম তাপমাত্রা’–র শিকার হতে চলেছে। ২০২৪–এ এই তালিকায় ২৪টি দেশ ছিল।

  • Link to this news (এই সময়)