• বাজেটে চরম হতাশ উত্তরের চা–মহল্লা
    এই সময় | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার

    চলতি বছরের বাজেটে চা শিল্পের উন্নয়ন নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আর তাতে চরম হতাশা নেমে এসেছে উত্তরের চা–মহল্লায়। একই সঙ্গে হতাশ ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনও। কারণ, গত বছর আবহাওয়ার খামখেয়ালিতে চায়ের উৎপাদন প্রায় ৫০ মিলিয়ন কেজি কম যেমন হয়েছে, তেমনি একের পর এক নিলামে চায়ের দামের অভূতপূর্ব পতনে অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চা শিল্প। এরই পাশাপাশি গত দশ বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকার ‘এসপিটিএফ’ অর্থাৎ স্পেশাল পারপাস টি ফান্ড বন্ধ করে দেওয়ায় রীতিমতো ধুঁকতে শুরু করেছে চায়ের ব্যবসা।

    ঠিক কী কী সহায়তা দেওয়া হতো ‘এসপিটিএফ’ এর মাধ্যমে? ওই বিশেষ কেন্দ্রীয় অনুদানে চা বাগানগুলিকে নতুন চারা রোপণ ও পুরোনো গাছ তুলে ফেলার জন্য হেক্টর প্রতি ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে সহায়তা দিত কেন্দ্রীয় সরকার। এছাড়াও কারখানার আধুনিকীকরণের জন্যও বাৎসরিক অনুদান দেওয়া হতো। এবারের বাজেটে ‘এসপিটিএফ’ ফের লাগু হবে বলে আশায় বুক বেঁধেছিল চা শিল্প মহল। কিন্তু হতাশ হয়েছেন প্রত্যেকে। এছাড়াও বন্ধ চা বাগানগুলি খোলার বিষয়েও কোনও দিশা মেলেনি বাজেটে।

    অভিযোগ, দেশের চা শিল্পের উন্নয়ন নিয়ে চিন্তাভাবনা না করে কেনিয়ার মত যন্ত্র নির্ভর উৎপাদক দেশ থেকে চা আমদানি করার লক গেট খুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। যার ফলে দেশের চা শিল্পের হাল চরম অনিশ্চয়তার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। সারা দেশে চা শিল্পের উপর নির্ভর করে অন্তত দেড় কোটি মানুষের রুটিরুজি চলে। অথচ ওই শিল্পের প্রতি বছরের পর বছর ধরে বঞ্চনা চলছে। টি অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার ডুয়ার্স শাখার চেয়ারম্যান চিন্ময় ধর বলেন, ‘সত্যিই খুব হতাশ।

    গত বছর আবহাওয়ার তারতম্য ও পোকামাকড়ের উপদ্রবে চা শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম এবার অন্তত ‘এসপিটিএফ’ ফের লাগু করা হবে। তাও হলো না।'’ ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার সচিব রাম অবতার শর্মা বলেন, ‘দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের এই ধরনের বঞ্চনা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। চা শিল্পের সর্বনাশ আসন্ন।’

    ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনের সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তীর কথায়, ‘গত মার্চ মাসে শিলিগুড়ির কাওয়াখালির সভায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন ক্ষুদ্র চা চাষিদের একাধিক কেন্দ্রীয় সহায়তা প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। অথচ বাজেটে ওই বিষয়ে একটি শব্দও খরচ করা হলো না। মোটের উপর এই বাজেটে চা শিল্পকে নিয়ে সদর্থক কোনও চিন্তাভাবনার প্রতিফলনই দেখা গেল না। আমরা ভীষণ ভাবে হতাশ।’

  • Link to this news (এই সময়)