অরূপকুমার পাল, ঝাড়গ্রাম
এ বার পুলিশকেও ‘টার্গেট’ করছে সাইবার প্রতারকেরা। সম্প্রতি একটি রিপোর্টে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এল। দশের অপরাধ পরিসংখ্যান বলছে, উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ১৮০ জনকে এ রকম ভাবে প্রতারণার জন্য ফোন করা হয়েছিল। এ বার এই তালিকায় বাদ গেল না এ রাজ্যের ঝাড়গ্রামও। খোদ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) গুলাম সরওয়ারের কাছে ফোন আসে। তাঁর সরকারি ও ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ফোন করে প্রতারকেরা। প্রথমে ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন আসে।
হিন্দিতে বলা হয়, ‘আপনার ক্রেডিট কার্ডে বেশি খরচ হয়ে গিয়েছে।’ উত্তরে ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘কত টাকা?’ প্রতারক বলেন, ‘৫ লক্ষ টাকা পেরিয়ে গিয়েছে।’ পুরো বিষয়টি বুঝতে পেরে মজা করেই পুলিশকর্তা বলেন, ‘আরে ক্রেডিট কার্ডে আমার খরচ তো ৫০ লাখ হওয়ার কথা! কী করে এত কম হল?’ তখনই উল্টো দিকের ব্যক্তি বুঝতে পারে, সঠিক জায়গায় ফোন যায়নি। পুলিশ কর্তা এর পর ফোনে পাল্টা বলেন, ‘কেন এ সব করছ ভাই?’ উত্তরে ‘প্রতারক’ বলে, ‘পেটের জন্য করছি।’ পুলিশ কর্তা বলেন, ‘কাজ করে খাও। এ সব করে কত গরিব লোকের টাকা কেন নষ্ট করছ?’ তখন ক্ষমা চেয়ে ফোন কেটে দেয় প্রতারক।
আবার একদিন ওই পুলিশ কর্তা অফিসের ফোন থেকে অধস্তন অফিসারের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তখন একটি অপরিচিত নম্বর থেকে চার বার ফোন আসে। অফিসের ফোনে শেষ হতেই ওই নম্বর থেকে ফের কল আসে পুলিশকর্তার ফোনে। পুলিশকর্তা ফোন ধরতেই অপরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি কার্যত ধমকের সুরে জানতে চান, ‘এতবার ফোন করলাম। কেন ফোন ধরছ না?’ স্বাভাবিক ভাবে কিছুটা হলেও হতচকিত হয়ে যান পুলিশকর্তা। তারপর পরিচয় জানতে চাইলে প্রতারক বলেন, ‘আমি সিবিআই অফিসার বলছি। এই নম্বর থেকে অসাধু কাজকর্ম হচ্ছে। দিল্লিতে এফআইআর হয়েছে। সিবিআই তদন্ত করছে।’ উল্টে পুলিশকর্তা জোর গলায় ফের পরিচয় জানতে চাইলে সাইবার প্রতারক ফোন করে কেটে দেয়।
ঝাড়গ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(অপারেশন) গুলাম সরওয়ার বলেন, ‘এ ভাবে বিভিন্ন লোকের কাছে ফোন আসছে সাইবার প্রতারকদের কাছ থেকে। র্যানডম নম্বর থেকে তারা ফোন করে। ফোন করে প্রথমেই মানুষকে ওরা ভয় দেখায়। যাতে নিজের বশে তাকে নিয়ে আসতে পারে। সচেতন মানুষজন বিষয়টি বুঝতে পেরে প্রতারণার খপ্পর থেকে মুক্তি পাচ্ছে। সাইবার প্রতারণা নিয়ে আমাদের সচেতনতা ক্যাম্প প্রতি মাসেই করা হয়। তা সত্ত্বেও মানুষজন সচেতন হচ্ছে না। পুলিশ, সিবিআই, সরকারি টেলি সংস্থা, বিচারকের নাম করে কেউ ফোন করলে প্রথমেই ভয় পাবেন না। প্রতারকদের চিনতে অসুবিধা হলে নিকটবর্তী থানায় যোগাযোগ করুন।’
ঝাড়গ্রামের ডিএসপি(সাইবার ক্রাইম) সব্যসাচী ঘোষ বলেন, ‘সরকারি অফিসারদের ফোন নম্বর বিভিন্ন পোর্টাল বা অ্যাপে থাকে। এছাড়াও সাধারণ মানুষের ফোন নম্বর বিভিন্ন অ্যাপ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে র্যানডম ফোন করছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার সাইবার প্রতারকরা জানে না কাকে সে প্রতারণা করছে। শুধুমাত্র ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কিছু তথ্যের ভিত্তিতে সাইবার প্রতারকরা ফোন করে।’
ইদানিং কি ঝাড়গ্রাম জেলায় সাইবার ক্রাইমের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে? সব্যসাচী ঘোষ বলেন, ‘সাইবার ক্রাইম আগেও ছিল। এখনও তেমনি আছে। যেহেতু ইদানিং আমাদের সাইবার কেসের ঘটনার তদন্ত, গ্রেপ্তারি হওয়া বা নিষ্পত্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তাই আপাত চোখে মনে হচ্ছে কেসের সংখ্যা বেড়েছে।’